পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৯৫॥
নাজির উদ্দিন মিঞা
গ্রাম নাজিরপুর
থানা ও জেলা পাবনা

 শান্তি কমিটির লোকদের কুমন্ত্রণা ও সরবরাহকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানী সৈন্যরা উল্লেখিত গ্রামটি অপারেশন করে। প্রায় ২০০/২৫০ পাক সৈন্য ও রাজাকার আল বদর ভোরের দিকে সমস্ত গ্রাম ঘিরে ফেলে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে ইতিপূর্বে আরও দুবার ঐ একই গ্রাম মিলিটারীরা অপারেশন করে।

 লোকজন ঘুমিয়ে ছিল। এ জন্য তাদের অধিকাংশ লোকই এই ঘেরাও জানতে পারেনি। তাই পাক সৈন্যরা প্রথমে গ্রামের লোকদের ধরা শুরু করে। তারা লোকজন ধরে তাদের মধ্য থেকে যারা অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যবান অর্থাৎ যাদের তারা মুক্তি বাহিনীর লোক বলে সন্দহ করেছে তাদেরকে আলাদা করে। অত:পর তাদের একটি নালার নিকট নিয়ে যায় এবং গলা কেটে উক্ত নালার মধ্যে ফেলে দেয়। এছাড়া বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েও হত্যা করে। অবশ্য কিছু লোককে গুলি করেও হত্যা করে। এমনি করে তারা সেদিন ৫৭জন লোককে হত্যা করে।

 ধৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আমিও ছিলাম। কিন্তু আমার চেহারা রোগা হওয়ায় আমাকে বৃদ্ধ ও অপছন্দ লোকদের সারিতে রাখে। আমি পাক সৈন্যদের হত্যাযজ্ঞ নিজের চোখেই সংঘটিত হতে দেখেছি।

 পাক সৈন্যরা অপর একটি দল এই সময় বাড়ীঘর লুটপাট করে। প্রায় ৫০০ ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ পোড়া বাড়ীগুলির মধ্যে পূর্বে পোড়া বাড়ীগুলির মধ্যে পূর্বে পোড়া বাড়ীগুলির মধ্যে পূর্বে পোড়া বাড়ীও ছিল। পূর্বের পোড়া বাড়ী যেগুলি মেরামত করেছিল সেগুলিও আবার পুড়িয়ে দেয়।

 তারা বহু সংখ্যক মহিলার উপর হৃদয়হীনভাবে নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনের শিকার পরিণত হয় ছেলেমেয়ের মা, সদ্য বিবাহিতা এবং কুমারী মেয়েরা। একাদিক পাক সৈন্য কারো উপর অত্যাচার করেছে বলে শোনা গেছে।

 পাক সৈন্যরা ফেরার পথে গ্রাম লুট করে সোনা-দানা, টাকা-পয়সা, গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী ধরে নিয়ে যায়।

 এ ঘটনার কয়েকদিন পরই দেশ স্বাধীন হয়।

স্বাক্ষর /নাজির উদ্দিন