পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

어어 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিউরে উঠল। শুধু মনে হতে লাগল, এরা বেশী দিন টিকতে পারবে না। নারী ধর্ষণে কোন জাতি টিকতে পারে নাই, পারবেও না। এইভাবে সারা রাত্রি কেটে গেল। সকাল ৮ টার সময় দরজা খুলে বের করল আমাকে নিয়ে গেল ক্যাপ্টেনের কাছে। ক্যাপ্টেন বলল জয়দেব কে? আমি বললাম আমার ছোট ভাই। সে কি করে? বি, এ পড়ে। কোন পার্টি করে? আওয়ামী লীগকে ভালবাসে। সে কোথায়? বলতে পারব না। কেন পারবে না? জানি না। এই প্রশ্নের উত্তরে ক্যাপ্টেনের মুখ দিয়ে আগুন ছুটতে থাকলো। বললো যদি বাঁচতে চাও বল জয়দেব কোথায়। কিন্তু আমার একই উত্তর জানি না। নিজে রাগ সামলাতে না পেরে একজন জোয়ানকে ডাক দিল এবং বলল চাবুকে গায়ের চামড়া তুলে ফেলতে। জোয়ন চাবুক মারতে আরম্ভ করে দিল। ওদিকে আমার বাবা চিৎকার করছে, ওকে আর মের না, আমাকে মার। কখন জ্ঞান হারিয়ে গেছে, জানি না। জ্ঞান ফিরে দেখি উল্লাপড়ার এক পরিচিত ঘরে বিচার হচ্ছে। আমার রক্তাক্ত দেহ দেখে কারও দয়া হোলম, কেউ বলল ভাল, কেউ বলল কিছু খারপ, এতে শাস্তি হলো, আবার ১০ বেত। আমার বাবাকে ঘাড় ধরে তাড়িয়ে দিল। ছোট সুপ্রিয় বন্ধু অরুণকে গুলি করে হত্যা করল। এদিকে আবার নতুন রাজাকার তৈরী করছে। বিচারে রায় দিয়েছিল উল্লাপাড়ায় থাকতে হবে নইলে গুলি করে মারবে। নজরবন্দী অবস্থায় থাকতে লাগলাম। এখন মনে হচ্ছে কেনই বা ওদের এত জয়দেবকে দরকার। জয়দের আমার ভাই, আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী, উল্লাপাড়াতে যত বড় আওয়ামী লীগের নেতাই আসুক না কেন, জয়দেবকে সবাই চিনতো এবং ভালোবাসতো। সে একদিন বলেছিল আমি হয়তো থাকবো না কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। এতে কোন দ্বিমত নেই। কুচক্রীর দল সাবধান হয়েই থাকে। কিন্তু হায় জয়দেব আজ আর আমাদের সামনে নেই। ক্ষতবিক্ষত দেহে বাড়ী ফিরলাম। নজরবন্দী আবস্থায় উল্লাপাড়ায় থাকতে লাগলাম। উল্লাপাড়ার দুঃখ দুর্দশা দেখে ঘরে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদতাম। আমি দেখেছি প্রতিদিন পাক সৈন্যরা কোথা থেকে যুবক ধরে এনে মুক্তিবাহিনীর নাম দিয়ে বহু যুবককে গুলি করে মেরেছে। একদিন দেখতে পেলাম একটি যুবককে ধরে এসে আমার বাড়ী পিছনে গুলি করে চলে গেল কিন্তু যুবকটির পেটের পার্শ্বে গুলি লেগেছে। সে শুধু বলছে আমার হাতটা ছেড়ে দাও, আমি বাঁচব, আমি কোন অপরাধ করিনি। যদি বাঁচতে না দাও আর একটা গুলি করে মেরে ফেল, যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু কোন লোক তার কথায় কান দিল না। অবশেষে সন্ধ্যায় যুবকটি অর্তনাদ করতে শুরু করল- একটু পানি দাও, কেউ একটু পানি দাও। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। কারণ দসু্যদের পা-চাটা গোলাম রাজাকারদের পাহারায় রেখেছিল যেন যুবকের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার পাহারায় থাকে। সন্ধ্যার পর রাজাকারদের বেয়নেটে তার প্রাণ হারায়, তার স্মৃতি চিহ্নস্বরূপ সেই অন্তিম স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে “মা পানি জন পথ”। স্বাক্ষর/শ্রী রথিকৃষ্ণ সাহা পাবনা