পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

めbr○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | SSఫి | আব্দুল্লাহ খান গ্রাম- পুবপাড়া জেলা- পাবনা পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির পদলেহী শান্তি কমিটির সহায়তায় পাক সৈন্যরা ২৮শে জুলাই তারিখে আমাকে ঈশ্বরদী থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আমার দুই হাত পিছনে বেঁধে দেয়। মোটা রশি দিয়ে এমন ভাবে এটে বাঁধে যে হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধনের অসহ্য যন্ত্রণা বোধ হতে থাকে। কিন্তু তখনও বোঝা যায়নি যে এর চেয়েও ভয়াবহ এবং কষ্টকর শাস্তি অপেক্ষা করছে। গ্রেফতার করার পর আমার উপর নির্দয়ভাবে প্রহার শুরু করে।চড়, লাথি, কিল, ঘুষি এবং রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটান শুরু করে। এ সময় যে সমস্ত অবাঙ্গালী ও শান্তি কমিটির লোক ঐখানে ছিল তারা এ শাস্তি প্ৰাণ ভরে দেখছিল এবং তাদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল তারা উক্ত শাস্তি বিধান দেখে তৃপ্তি বোধ করছিল। কিছুক্ষণ এমনিভাবে প্রহার করার পর আমাকে জীপে করে পাবনা জেলখানায় নেওয়া হয়। জেলখানার একটি ছোট্ট আলো বাতাসহীন প্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখে। জেলখানার উক্ত ঘরে ঢোকার পর তিনজন সামরিক লোক আমার কাছে আসে। তারা এসে আমাকে দেওয়ালের পাশে নিয়ে যায় এবং আমাকে প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বলে। তারপর ঐ অবস্থায় আমার মাথাকে মাটিতে ঠেকতে বলে। এ সময় আমার পাছা অসম্ভবভাবে টান হয়ে থাকতে হবে বলে তারা নির্দেশ দেয়। যাহোক, তাদের নির্দেশ মত আমি ঐভাবে পজিশন নিলে ঐ সমস্ত লোকেরা আমার উপর অত্যাচার শুরু করে। প্রথমে আমার ঐ টান পাছার উপর ধান ভানা চাকা যে ফিতায় টানে ঐ ফিতা (সম্ভবতঃ অথবা ঐ জাতীয় মোটা ফিতা) দিয়ে শটাশট প্রহার করতে থাকে। প্ৰহারের যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগলে অথবা শরীরকে সোজা বা মোড়া দিতে লাগলে তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিত ও প্রাণনাশের হুমকি দিত এবং ঐ রূপ না করতে বলত। এই অবস্থায় প্রহার কিছুক্ষণ চলার পর আমি অবসন্ন হয়ে পড়ি। আমি মাটিতে পড়ে যাই। ইতিমধ্যেও যে সৈন্যটি প্রহার করছিল সম্ভবতঃ সেও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন মাটিতে পড়ে যাওয়া অবস্থায় একটি সিপাই রুলার দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় পেটাতে থাকে।পেটানোর যন্ত্রণার চোটে যখন আমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মুখোমুখি তখন আমাকে সময়িকভাবে প্রহার বন্ধ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কতজন মিলিটারী মেরেছি, বিহারী মেরেছি, মুক্তিবাহিনীর লোকেরা কোথায় আছে, অস্ত্রশস্ত্র কোথায় রেখেছি ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। স্বাভাবিকভাবে আমি সমস্ত কিছু অস্বীকার করি। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের ফাঁকে ফাঁকে তারা প্রহার করে। প্রহার ও জিজ্ঞাসাবাদের পালা শেষ হলে আমাকে পুনর্বার বন্দী করে রাখে।