পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉br8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড Il NSS Il কাজী আব্দুল খালেক খুলনা সদর খুলনা ২৮শে মার্চ দুপুর তিনটার সময় আমি ভাত খেতে যাচ্ছিলাম তখন দেখতে পাই যে আমার বাড়ীর চারিদিকে খানসেনা ও বিহারী ঘিরে ফেলেছে এবং দরজায় দমাদম লাথি মারছে। তারা দরজা ভেঙে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে এবং একজন খান সেনা একটা অটোমেটিক চাইনিজ রাইফেল আমার বুকের উপর চেপে ধরে এবং প্রথম প্রশ্ন আমাকে করে যে, তোম বাঙ্গালী হ্যায়, না বিহারী হ্যায়, তোম আওয়ামী লীগমে ভোট দিয়া, ৯৯% লোকনে আওয়ামী লীগমে ভোট দিয়া তো হামভী দিয়া, মাগার ম্যাই আওয়ামী লীগের ইলেকটেড মেম্বর নেহি হ্যায়। তখন তারা আমাকে বাড়ীর বাইরে নিয়ে আসে এবং একটা ট্রাকে তোলে। ঐ ট্রাকের ভিতর আরও ৭/৮ জন লোককে দেখতে পাই। তার মধ্যে খালিসপুর শহরের ডি,এস,পি ও ওয়াপদার একজন অফিসারকে দেখতে পাই। ডি,এস,পির, সারা শরীরে রক্ত এবং কপালের উপর বড় একট গর্তের মত দেখতে পাই আর ওয়াপদার অফিসারটির মুখের এক পাটির দাঁত ভাঙা দেখতে পাই। আমাদেরকে ট্রাকের উপর বসান হয় এবং দুই পাশে দুইটা মেশিনগানধারী শাস্ত্রী দাঁড়িয়ে থাকে। এই সময় একটা মিলিটারী এম, পি এসে আমাকে পুনরায় প্রশ্ন করে যে তুম বাঙ্গালী হ্যায় না বিহারী হ্যায়। আমি বলি যে আমি পাকিস্তান কা মোহফেজ হ্যায়। তখন এম,পি, বলে তোমহারা আইডিন্টিটি কার্ড হ্যায়। তার উত্তরে আমি আমার অফিসের আইডিন্টিটি কার্ড তাকে দেখাই। তখন সে আমাকে ছেড়ে দেয় কিন্তু আর সবাইকে ধরে নিয়ে যায়। আমি ছাড়া পাবার আরও একটা কারণ আমি নিখুঁতভাবে উর্দু বলতে পারতাম। ৭ই জুলাই দৌলতপুর থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ আমাকে হাতে হাতকড়া দিয়ে খুলনাতে এস,ডি, ও কোর্টে নিয়ে যায়। কিন্তু আমি কোর্টে পৌছার আগেই কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাকে খুলনা জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে বলা প্রয়োজন যে এই সময় দুইদিন আমাকে কিছু খেতে দেয় নাই। আমি যখন জেল হাজতে গিয়ে পৌছালাম তখন সেখানে বহু আওয়ামী লীগের নেতা, প্রফেসর এবং পুলিশের অফিসারকে দেখতে পাই। তাদের প্রত্যেকের অবস্থাই খুব শোচনীয় দেখতে পাই। তাদের কারো গায়ে চুলকানী, পাচড়া হয়ে বোঝাই হয়ে গিয়েছে আবার কেউ বা ভীষণভাবে অসুস্থ। এই সময় আমি সেখানে একজন প্রফেসরকে দেখতে পাই তাকে নাকি যশোর থেকে ধরা হয়েছিল এবং যশোর ক্যান্টনমেন্টে তাকে ভীষণভাবে অত্যাচার করা হয় যার ফলে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে ভদ্রলোককে খান সেনারা মুক্তিবাহিনীর স্পাই হিসাবে ধরে। এই ভদ্রলোক এই সময় শুধু শুধু লেকচার দিয়ে চলেছেন। আমাকে রাত্রিতে যে ঘরে থাকতে হত সে ঘরটা ছিল খুব ছোট। সে ঘরে ভালভাবে বড়জোর ৫০ জন থাকতে পারে। সেখানে ৪ শত জন কয়েদীকে রাত্রিতে থাকতে দিত। প্রত্যেককে ‘কাত’ হয়ে শুয়ে থাকতে হত। কোনরকম নড়াচড়া করার উপায় এই সময় থাকত না। আমি জেল হাজতে থাকা অবস্থায় দেখতে পেতাম যে প্রত্যেক দিন রাত্রিতে খান সেনারা জেল হাজত থেকে অনেক কয়েদীকে জোর করে ধরে নিয়ে যেত। তাদের আর কোন খবর আমরা পেতাম না বা আর ফিরে আসতো না।