পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉br○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড খান সেনারা প্রত্যেক দিন বা আশেপাশে থেকে যে সব লোককে ধরে আনতো তাদের প্রতমে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে ভীষণভাবে টরচারিং করত এবং যাদের মারা হত তাদেরকে জেল হাজতের মাঠে দিয়ে আসতো এবং নদীর পাড়ে জবাই করা হত। তাদের কাকুতি, মিনতি বা কান্নাকাটি অনেক সময় আমরা শুনতে পেতাম। বাদ বাকীগুলিকে জেল হাজতে নিয়ে আসতো। তাদের কাছে আমরা জানতে পারতাম খান সেনাদের অমানুষিক নির্যাতনের কথা। মানুষ হয়ে মানুষের উপর যে কত বড় নির্দয় হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না। এই সময় আমাদের দিনে একবার খেতে দিত- ভাত ও ডাল, যা দেখলেই বমি হয়ে যেত, খাবার কথা তো দূরে থাক। তবুও জীবন ধারণের জন্য তাই খেতে হত। আমরা যে চারশত লোক রাত্রিতে এক রুমে থাকতাম। পায়খানা প্রস্রাব ঐ রুমের ভিতরের এক কোনায় করতে হত, যার ফলে দুর্গন্ধে রুমের ভিতর থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়তো। ৯ই জুলাই আমার আত্মীয়-স্বজনের ধরপাকড়ের ফলে এস, ডি, ও কোর্ট থেকে ৫০০ টাকা সিকিউরিটির বদলে জামিন মঞ্জুর করে। এই সময় কয়েকজন লোক জেল হাজতে আসে এবং আমকে বলে যে তোমার জামিন হয়ে গিয়েছে। তারা আমাকে জেল হাজত থেকে বের করে চলনা লাইটদ্রাস-এর অফিসে নিয়ে গিয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হয় যে আমি কতজন বিহারীকে হত্যা করেছি। আমাকে খালিসপুর “নোভাল বেস”-এর হাতে হ্যা-ওভার করে। এই নেভাল বেস-এর কমাডিং অফিসার ছিল কর্নেল গুলজারী। এখানে যাবার পর প্রথম আমাকে কর্নেল গুলজারী প্রশ্ন করে যে, তোম কালপ্রিট হ্যায়, আমি তখন বলি যে আমি এমন কোন কাজ করি নাই যার জন্য আমি কালপ্রিট হতে পারি। তখন সে আমাকে প্রশ্ন করে যে তুমি কত বিহারীকে কেটেছো বা নির্যাতন করেছো। তখন আমি বলি যে আমার জীবনে আমি কোনদিন কোন বিহারীকে মারি নাই বা তাদের উপর অত্যাচার করি নাই। তখন সে আমাকে বলে যে ঠিক হ্যায়। তোম জঙ্গোল সাভ কর। আমি তখন নেভাল বেস এর সম্মুখের সমস্ত জায়গায় জঙ্গল সাফ করতে থাকি। এই সময় কাঁচিতে আমার আঙ্গুল কেটে দুই ভাগ হয়ে যায়। তিন দিন আমাকে এইভাবে কাজ করতে হয়। প্রত্যেক দিন সকাল ৬টা থেকে ১টা পর্যন্ত, তারপর ১টা রুটি খেতে দিত এবং ২টা থেকে আবার ৬টা পর্যন্ত ঘাস কাটতে হত। কারণ তারা নেভাল বেস এর আশেপাশে সমস্ত জায়গা পরিস্কার করছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে। ২য় দিন আমি যখন ঘাস কাটছিলাম তখন একটা শিয়াল ঘাসের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল যার ফলে ঘাস নড়ছিল। তখণ সমস্ত খান সেনারা পজিশনে চলে যায় এবং বলে যে মুক্তিবাহিনী আগিয়া। ৩য় দিনে আমি যখন ঘাস কাটছিলাম তখন সেখান দিয়ে ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন যাচ্ছিল। সে আমাকে দেখে সিপাইদেরকে বলে আমাকে তার চেম্বারে পৌছে দিতে। তার চেম্বারে গেলে সে আমাকে প্রথমেই রোলার দিয়ে একটা বাম কাঁধে আঘাত করে এবং বলে যে তোম শালা বহুত বহিরীকো খতম কর দিয়া আওর বহুত বিহারীকো আওরাতকে ইজ্জত লিয়া। এই সময় আমাকে সে কোন কথা বলার সুযোগ দেয় না। সে আমাকে রোলার দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। এই সময় সে তার সহযোগীকে বলে আমাকে পায়ে শিকল বেঁধে টাঙ্গিয়ে দিতে। আমাকে নিয়ে পায়ে শিখল বেধে উল্টো দিকে ঝুলিয়ে দেয়। এই সময় ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন পুনরায় এসে আমাকে বলে “শালা তোমকো খতম করে দেগা”-এই বলে সে আমাকে মোটা রোলার দিয়ে আঘাতের পর আঘাত ও অশ্রাব্য গালাগালি দিতে থাকে। কিছুক্ষণ মারার পর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর তারা আমাকে আর মেরেছে কিনা আমি জানি না। আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমি দেখতে পাই যে আমি একটা কম্বলের উপর শুয়ে আছি, আমার সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা। এই সময় কর্নেল গুলজারী সেখানে আসে এবং আমার এই অবস্থা দেখে সে ভীষণভাবে রেগে যায় ক্যাপ্টেন সাহাবের উপর। সঙ্গে সঙ্গে সে আমার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে এবং পরে জানতে পারি যে ২ দিন পর কর্নেল গুলজারী ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিনকে চিটাগাং নেভাল বেস-এ বদলী করে দেয়। খালিশপুর নেভাল বেসে একজন পাঞ্জাবী