পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖbrԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l 〉こ○ l কবির আহমদ বি, ডি, আর খুলনা ২৭শে মার্চ অবস্থার অবনতি আরও ঘটে। পাকসেনারা ব্যাপকভাবে সারা শহর ঘুরতে থাকে, আমাদের সঙ্গে ব্যাবহারও তেমন ভাল ছিল না। আমি গোপনে ওখানে মরিচা খনন করি এবং পরবর্তী অবস্থার জন্য প্রস্তুত হই। ২৮শে মার্চ আমাকে টেলিফোনে শাখা হেড কোয়ার্টারে ডেকে আনা হয় অন্য জায়গায় পাঠানো হবে বলে অফিসে চলে আসি। এসে দেখি আধ হাত পরপর পাকসেনা সমগ্র শাখা ঘিরে রয়েছে ভারী ভারী অস্ত্র নিয়ে আমি বুঝতে পারলাম। আমার হাতিয়ার (সামান্য রাইফেল) জমা নিয়ে নেওয়া হলো। পর পর ক্রমশঃ আমাদের ১৩৭ জনকে নিয়ে আসে এবং অস্ত্র জমা নিয়ে নেয়। আমাদের পোষাক খুলে নিল এবং বেসামরিক পোষাক পরতে বলে ভিতরে থাকতে বলে। নামাজ পাড়ারও সময় নির্দিষ্ট করে দিল। ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের সবাইকে এখানে আটকে রাখে। বি, ও, পি, গুলির কি হলো কিছুই জানতে পারলাম না, দুনিয়ার কোন খবর প্রায় পেতাম না। বেশ বুঝলাম যুদ্ধ চলছে পাঞ্জাবীদের সাথে। আমরা বন্দী, মৃত্যু আসন্ন। ৬ই এপ্রিল গাড়িতে করে নিয়ে যায়- কোথায় যাচ্ছি বলে না, পরে দেখলাম জেলখানায় নিয়ে আসলো। ভিতরে সবাইকে ঢুকিয়ে দিল। ১১নং সেলে আমাদের বন্দী করে রাখলো, পাকসেনারা পাহারায় থাকলে। ৭ই এপ্রিল থেকে ৫/৬ জন করে বের করে আর্মিরা চারিদিকে ঘিরে অমানুষিকভাবে প্রহার করতে থাকে। জেলখানার সিপাই লাঠি জোগাড় করে দিত। পাক সেনারা যথেষ্টভাবে মারধর চালিয়েছে। আগষ্ট মাসের শেষের দিকে খুলনা ই,পি,আর এর উয়িং কমাণ্ডার গিয়ে আমি সহ সাতজনকে চার্জশীট দিয়ে বাকী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। ঐ মাসেই আমাদের সাহজনকে বাদ দিয়ে সবাইকে শপথ করিয়ে নানা উপদেশ দিয়ে বাইরে বের করে নিয়ে যায়। আমরা (১) নায়েব সুবেদার আব্দুল মান্নান, (২) সৈয়দ আহমদ, (৩) কবীর আহমদ হাবিলদার, (৪) ল্যান্স নায়েক জয়নাল জাবেদীন (৫) নায়েক ক্লার্ক শামছুদ্দীন (৬) সিপাই আব্দুল লতিফ আরমার, (৭) সিপাই আবুল হাশেম অন্য সেলে বন্দী থাকি। জেল পুলিশ মতিউর রহমানের মারফত বাইরের খবরাখবর সব আমরা পেতাম বিদেশী এবং মুক্তিবাহিনীর সব খবর দিত। ডাঃ আবুল মজিদ আমাদের ভালোভাবে দেখাশোনা করেন এবং সব খবরাখবর দিতেন। অষুধ দেবার নাম করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে খবরাখবর দিতেন। যেখানে সেখানে পিটিয়েছে, মারতে মারতে ড্রেনের মধ্যে নিয়ে গিয়ে উপুড় করে ফেলে লাঠি পিঠের উপর ভেঙেছে। সমস্ত শরীর রক্তে ভরা, অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত মারতো এবং যথেচ্ছভাবে গালাগালি করতো। বলত ‘বল কত বিহারী মেরেছিস। সেপ্টেম্বর থেকে আমার বিরুদ্ধে চার্জ দিয়ে ইন্টারোগেশন শুরু করে । আমার বিরুদ্ধে চার্জ (১) আমি আক্রমণ করতে গেছি অবাঙ্গালীদের (২) সীমান্তে সিপাই পাঠিয়েছি সবাইকে সবাইকে আসার জন্য (৩) অস্ত্র সরবরাহ চেষ্টা এবং অস্ত্র ধ্বংস করা। (৪) সিপাইদের উস্কানী দিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছি। এক একটি প্রশ্ন করে আর মারতে থাকে। খুব মারধর করার সহ্য করতে না পেরে সব স্বীকার করে তাদের তৈরী রিপোর্ট দস্তখত করি। চার্জশীটে আমি এ্যাক্ট অনুযায়ী আমার মৃত্যু লেখা ছিল।