পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sఫి: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l 〉こQ l শ্ৰী শক্তিপদ সেন থানা ও জেলা- খুলনা ১৯৭১ সালের ১৯ শে এপ্রিল রোজ বুধবার বেলা ১১টার সময় খুলনা ট্রেজারীতে চাকরীতে কর্মরত অবস্থায় একজন পাক মিলিটারী আমাদের অফিসে আসে এবং আমাকে ডাকে। আমি তার নিকট উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে আমার পিছে রাইফেল ধরে সঙ্গে করে তাদের ক্যাম্প সার্কিট হাউজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। যেমনঃ- (ক) কাকে ভোট দিয়েছ? (খ) কত জন বিহারী মেরেছ? (গ) এম এম দাস কোথায়? আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর আমার দুহাত পিছনে দিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তারপর প্রশ্নবাদ করতে থাকে আর কাঠের রোলার, লোহার রড দিয়ে শরীরের সমস্ত জয়েন্টে প্রহার করতে থাকে। প্রহার করার মাঝে বুট দিয়ে লাথির পর লাথি মারতে থাকে। উক্ত প্রকারে প্রহার করার পর সিগারেটে আগুন ধরিয়ে আমার সমস্ত শরীর চেপে ধরে পুড়িয়ে দিতে থাকে। একটু এদিক ওদিক ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলে আবার মার শুরু করে দিত। এইভাবে সন্ধ্যা ৮-৩০ পর্যন্ত অত্যাচার করার পর তিন জন মিলিটারী আমাকে হাত খুলে দিয়ে বলে চল শালা তোকে বাড়ী পৌছে দিয়ে আসি। এই বলে আমাকে সামনে রেখে একজন পিছে আর দু’জন দুইপাশে রাইফেল ধরে ১নং ফরেষ্ট গেটে নিয়ে যায়। তার পর সেখানে নিয়ে দু’হাত পিছে দিয়ে পিঠ মোড়া করে বেঁধে ফেলে। আর দুপা একসঙ্গে করে বেঁধে ভৈরব নদীতে পিছন হতে লাথি মেরে ফেলে দেয়। ফেলে দেওয়ার পর আমি ভাসতে ভাসতে প্রায় ২০০/৩০০গজ যাবার পর আমার পায়ের রশিটা খুলে যায়। তার পর আমি পায়ের তলায় মাটি পাই। সেখানে আশ্রয় নিয়ে হাতের রশিটি খুলে ফেলি এবং সেখানে আত্মরক্ষার জন্য পানির নিচে সমস্ত শরীর ডুবিয়ে রেখে কোনরকম নাক বাঁচিয়ে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সেখানে কাটাই। তারপর নদী হতে উঠে পালিয়ে খুলনা টাউন মসজিদে ইমাম সাহেবের সাথে মসজিদ প্রাঙ্গণে আমার দেখা হয়। মসজিদের ইমাম সাহেব আমাকে বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যপারে যথেষ্ট সাহায্য করেন। তারপর এর মধ্যে দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে আমার নিজ বাড়ী গিয়ে আশ্রয় নেই এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পূর্ব পর্যন্ত আমি বাড়ীতে থেকে যাই। স্বাক্ষর/ শক্তিপদ সেন ১৯/৭/৭৩