পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ી S ૨૭ |ી রেবা রাণী নাথ ডাক ও থানা- ডুমুরিয়া জেলা- খুলনা জুন মাসের শেষের দিকে আমরা পাথরঘাটা হয়ে ভারতে যাচ্ছিলাম। দলে ছিলাম প্রায় ৮/১০ হাজার লোক, সবাই আমরা ভারতে যাব। রাত থেকে সকালে ৮/৯টার দিকে আমরা যা হোক কিছু রান্নাবান্না করছি এমন সময় ৩/৪ গাড়ী মিলিটরী আসে। সঙ্গে সঙ্গে পাক সেনারা গুলি চালিয়ে বহু লোককে হত্যা করে। এবং বহু লোককে ধরে গাড়ীতে তোলে। প্রত্যেক গাড়ীতে ১৫/২০ জন করে মেয়েদের তুলে নেয়। ওখানেই অনেকের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। পাক ঘাঁটি ঝাউডাঙ্গাতে আমাদের নিয়ে যায়। ছেলেগুলিকে এক যায়গা করে গুলি করে সবাইকে হত্যা করে শুধু আমাদেরকে নিয়ে যায়। ওখানে গিয়ে ৫০/৬০ জন মেয়েকে দেখলাম বিভিন্ন যায়গার, ঝাউডাঙ্গারও অনেক মেয়ে দেখলাম। অনেক কলেজ পড়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়া মেয়েকে দেখলাম। পাকসেনারা আমাদেরকে ৪/৫ দিন রাখে। ওখানে ৩/৪ টি তাবু ছিল। একটি একটি সিটের কাছে ২/৩টি মেয়ে নিয়ে এসে রাখতো। পাক সেনারা জোর করে ধরলে দুটি মেয়ে কিছুতেই তাদের শিকার হতে চায় না। তখন পাকসেনারা ভীষণভাবে দৈহিক পীড়ন করে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা একদল সবসময় ঘরে থাকতো, অপর দল আসা পর্যন্ত আমাদের উপর অত্যাচার চালাতো। আমি যে তাঁবুতে ছিলাম সেখানে ১৫/১৬টি মেয়ে ছিল। সীট ছিল ৮/১০টি। পাকসেনারা যখন তখন আমাদের উপর দৈহিক পীড়ন চালাতো। প্রায় সবসময় বিভিন্ন স্থান থেকে পাক সেনারা আসতো আর আমাদের আমাদের উপর অত্যাচার চালাতো। পাক সেনার বলতো বাংলাদেশ হবে না, তোমাদের আমাদের সঙ্গেই থাকতে হবে, জোর করলে গুলি। আমাদের উপর একই সময় ৫/৭টি করে পাক সেনা অত্যাচার চালাতো। বিভিন্ন ভাবে তারা তাদের যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত করতো। আমাদের ৪ দিনের মধ্যে ১দিন ভাত দিয়েছিলো। একজনের সাথে অপরজনের কথা বলতে দিত না। আমরা ওখানে হিন্দু মেয়ে বেশী ছিলাম কিন্তু সবাই আমরা মুসলমান বলে পরিচয় দিই। আমাদের গায়ে বস্নাউজ রাখতে দিত না। সবাইকে কেবল শাড়ী পরিয়ে রাখতো। তুলে দেয়। প্রত্যেক রাজাকার এক একজনকে নিয়ে যায়। আমাকে এক রাজাকার তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। ৩/৪ দিন রাজাকারটি আমার উপর অত্যাচার চালায়। রাজাকারটির বেী ও মা নিষেধ করলে গুলি করতে যেতো। এরপর ওখান থেকে রাজাকারের মা এবং বৌয়ের সহায়তায় পালিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখানে গোল পুকুর ক্যাম্পে থাকতাম। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসতাম। আমি তখন ৭/৮ মাসের আমতঃসত্ত্বা ছিলাম। আমি নারী পুর্নবাসন কেন্দ্রে আবেদন করি সমাজকল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে। ওরাই আমার চিকিৎসা এবং কাজের ব্যবস্থা করেন। স্বাক্ষর/রেবা রাণী নাথ ২৫/৭/৭৩