পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉b○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l めとか○ l আখতার হোসেন চৌধুরী ডি, এস, পি, শিল্প এলাকা খালিশপুর জেলা- খুলনা ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার জন্য আমি সবরকম তদবীর শুরু করি এবং তদবীর করতে গিয়েই আমি ২১শে মে সকাল ৯টায় মেজর বাবরের কবলে পড়ে যাই। আর সঙ্গে সঙ্গেই পাকসেনার পাহারাধীনে আমাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়। যশোর ক্যান্টনমেন্টে এফ-আই-ইউ (ফিল্ড ইনটেলিজেন্স ইউনিট)-এর একটি ঘরে আমাকে আটক রাখা হয়। সেই ঘরে আমি ছাড়া আরও ৫০/৬০ জন বন্দী। এই এফ-আই-ইউ একটা বিভীকাময় স্থান। সবাই ঘরের মেঝেতে জুতার বালিশ মাথআয় দিয়ে শুয়ে থাকতাম। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র একবার সন্ধ্যায় আমাদের খেতে দিতো। পচা ভাত, ডাল, প্রায় অখাদ্য। ওরই মধ্যে আমার মন বিদ্রোহ ঘোষণা করছিল, ১২ দিন শুধু পানি খেয়েছিলাম। সারাদিন সেখান থেকে যাকে ইচ্ছা বের করে নিয়ে যেয়ে আর এক ঘরে এফ, আই, ইউ এর অফিসাররা ইন্টারোগেশন করতো এবং অমানুষিক অত্যাচার চালাতো। সন্ধ্যা আটটায় একজন জমাদার বা সুবেদার এসে একটা লিষ্ট থেকে নাম ডাকতো। এই লিষ্ট-এ ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম থাকতো। যাদের নাম ডাকতো তারা লাইন ধরে দাঁড়াতো, তারপর তাদের জামাকাপড় ছিলে চোখ আর পেছন দিকে হাত বেঁধে গাড়ী করে নিয়ে মেরে ফেলতো। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন লোকদের আনা হতো। অমনি করে মেরে ফেলা হতো। একদিনের কথা আমি কোনদিন ভলবোনা। এটা ছেলে। মুক্তিবাহিনীর একজন। তাকে যখন মিলিটারী অফিসার ইংলিশে ষ্টেটমেন্ট লিখতে বলেছিল তখন সে বলেছিল-“আমি বাঙ্গালী”। বাংলায় অনার্স পড়ি। বাংলাকে শত্রমুক্ত করতেই আজ আমার এই অবস্থা। কাজেই কিছুতেই আমি ইংলিশে লিখবোনা। তাকে যেভাবে মারা হয়েছিল সে কথা আমি লিখতে পারবো না। তারপর এফ, আই, ইউ থেকে এফফ, আই, টি (ফিল্ড ইন্টারোগেশন টিম) এর আণ্ডারে এম পি, ইউনিট-এ আমাকে আটক রাখা হয়। এই এফ, আই , টি ইউনিটে আমাকে নিজ হাতে লিখে দিতে হয় যে আমি খালিশপুর পিপলস জুটমিল ও ক্রিসেন্ট জুটমিলের ৭০০০ হাজার বিহারী হত্যা করেছি। প্রথমে ২ দিন লিখতে চাইনি। তখন আমাকে পা উচু আর মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হয়। মাত্র তিন মিনিট সময় দিয়েছিল। পাশের যেখানে লেখা আছে প্যানিক চেম্বার’ সেখানে ঝুলিয়ে রাখবার ব্যবস্থা আছে। হঠাৎ ঐ ঘরের দিকে নজর পড়তেই দেখি আরও তিনজন সেখানে ঝুলছে। তাদের নাক মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। সেই সময় এক অফিসার এসে বললো “দেখো ইলোককো হলত দেখো। মাগর তুম নেই মানগে তুমহারা হালত এ্যাইসা হোগা”।সেই মুহুর্তে আমি ঠিক করলাম ওরা যা বলেছে তাই লিখে দেবো। এখনও মনে আছে আমি বিছমিল্লাহ' বলে মিথ্যা লিখে দিলাম। একজন বিহারী ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে আমাকে স্বীকার করিয়া নেওয়া হয়। মার্শাল লৈ কোর্টে আমার বিরুদ্ধে একট কেস দায়ের করা হয়। তখনই আমি বুঝতে পরি কেন আমাকে জীবিত রেখে ছিল। আমার ষ্টেটমেন্ট পড়ে একজন মিলিটারী অফিসার আমাকে ব্যঙ্গ করে বলে- “তুম বহুত আচ্ছা ষ্টেটমেন্ট দিয়া তোমকো জলদি ষ্টেটমেন্ট ডিভিশন হেড কোয়টারে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে একজন লেঃ কর্নেল আমাকে দেখতে আসে ও নানা ধরনের প্রশ্ন করে। পরে তারই অর্ডার অনুসারে আমাকে ১লা সেপ্টেম্বর পিপলস জুটমিলে নিয়ে এসে খুরশীদ (এফ, আই, ইউ) মেজর সরহাদ (এফ,আই,টি), মেজর আখতার