পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ δ& বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |l აყუ8 | তাহমীনা বেগম (দিপালী) গ্রাম-বৈতপুর ডাকঘর ও থানা- বাগেরহাট জেলা- খুলনা ২৪শে এপ্রিল পাকসেনারা কাড়পাড়া হয়ে বাগেরহাট আসে। এসেই কাড়াপাড়া এলাকাতেই ১০০ উপরে লোককে হত্যা করে। নাগের বাজার তেলপট্টি ইত্যাদি এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া শুরু করে এবং বলে দেয় লুট করার জন্য, মুসলমানের অধিকাংশ ঘরবাড়ী সব লুট করা শুরু করে। মে মাসে এখানে শান্তি কমিটি সেই সঙ্গে রাজাকার বাহিনী গঠন হয় পরবর্তীকালে রজব আলী ফকির চালিয়েছে বেশী। শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে বাগেরহাট শহর এলাকাতে যত হিন্দু ছিল কিছু হত্যা বাদে সবাইকে মুসলমান ধর্মে দিক্ষীত করে। এরপর গ্রামের দিকে হাত বাড়ায় গ্রামকে গ্রাম ধরে সবাইকে মুসলমান করতে থাকে। আমি আমার স্বামী,ছেলেমেয়ে, বাবা, মা, কাকা, কাকীমা তাদের ছেলেমেয়ে সবাই ইসলাম ধম্যে দিক্ষা নিই। কিন্তু রাজাকাররা এর পরেও অত্যাচার করতে ছাড়েনি। এরপরও অসংখ্য লোককে হত্যা করেছে। ২২শে আশ্বিন রাত তিনটার দিকে ৫০/৬০ জন রাজাকার আমাদের বাড়ী ঘিরে ফেলে। প্রথমে তারা মুক্তিবাহিনী বলে পরিচয় দিয়ে থাকতে চায় রাতের মত। অনেক অনুনয়-বিনয় করে। প্রথমে আমার ভাই প্রদীপ গুহ দেখেই চিনেছিল তারা রাজাকার। তাই সে ছাদ দিয়ে গাছ বেয়ে পিছনে নামবার চেষ্টা করেছে। উপর থেকে নিচে নামলেই রাজাকাররা ধরে ফেলে। ওকে কিছু দূর নিয়ে গিয়ে বেয়োনেট দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তারপর বাবা কাকা এবং পাশের বাড়ীর তিনজনকে কিছু দূর নিয়ে গিয়ে সিরাজ মাষ্টার এবং তার দল গুলি করে মাথা সব উড়িয়ে দেয়। সকালবেলা আমরা সেসব লাশ উদ্ধার করি। হত্যা করে বাড়ীঘর লুট করে সব নিয়ে চলে যায়। আমরা যারা বেঁচে ছিলাম বাগেরহাট শহরে চলে আসি। বাড়ীতে কেবল একজন কৃষাণ এবং আমার ৭০ বছরের বৃদ্ধা দিদিমাকে রেখে আসি। কাৰ্ত্তিক মাসের ১২/১৩ তারিখ হবে। রাজাকাররা আবার যায় আমাদের গ্রামে। দড়টানা নদীর ওপার থেকে মুক্তিবাহিনী গোলাগুলি করতো। তাই রজব আলী অর্ডার দেয় সমস্ত এলাকা ঘরবাড়ী ভেঙে ধ্বংস করে গাছপালা পরিষ্কার করে ফেলার জন্য। ঐদিন আমাদের বাড়ীতে ঢোকে এবং দিদিমাকে লেপকাঁথা দিয়ে জড়িয়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। আগুন দিলে দিদিমা আমার কাকার নাম ধরে বার বার চিৎকার করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সমস্ত এলাকা পুড়িয়ে ধ্বংস করে। ভোলা বোসকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। রাধা বলমভ গ্রামে মেয়েদের রাজাকাররা ধরে নিয়ে আসে। রাজাকাররা সারারাত পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে দিনের বেলা গুলি করে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রাখে। বলরাম সাহাকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। তার বিরাট গদির উপরে রজব আলী বসত, চারিদিকে রাজাকার ঘিরে থাকতো। ওখানে একটি ঘরে লোকদের জবাই করতো। প্রত্যেকদিন ১০টি লোক যোগাড় করতেই হতো। আমি একদিন এক লোকের সুপারিশ করতে গিয়ে দেখলাম ঘরের ভিতর চাপ চাপ রক্ত পড়েছে। মদনের মাঠ ওয়াপদা রেষ্ট হাউসে একটি কক্ষে অসংখ্য লোককে জবাই করেছে। খাদার গ্রামে এক বাড়ী থেকে সবাই ধরে এনে হত্যা করে। ডাক ংলো ঘাটে প্রত্যেহ অসংখ্য লোককে জবাই করেছে বেয়োনেট দিয়ে।