পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ5Գ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড Ι Σ Ε Ω ΙΙ মোঃ শহীদুল ইসলাম এ্যাডভোকেট থানা- কোতোয়ালী, যশোর এপ্রিলের ২৭ তারিখে বাসার খোঁজ নেবার জন্য শহরে চলে আসি। কিন্তু মায়ের অনুরোধে সেদিন বাসাতে রাত্রি কাটানোর জন্য থেকে যাই। কিন্তু সেই দিন রাত্রি দু’টার সময় পাকসেনারা আমাদের বাসাসহ আরও অনেকগুলো বাসা ঘেরাও করে এবং আমাদের বাসার ভিতরে যেয়ে দরজায় ধাক্কা মারতে থাকে। আমার আব্বা দরজা খুলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার আব্বাকে ধরে ফেলে এবং তাঁর চোখ বেঁধে ফেলে। তারপর লাফ দিয়ে একজন আমার নিকট চলে আসে এবং আমাকে ধরে ফেলে এবং আমারও চোখ হাত বেধে ফেলে। তারপর আমাকে এবং আব্বাকে বাসার বাইরে নিয়ে যায়। আমি অনুনয়-বিনয় করে বলতে থাকি আমরা মুসলমান, আমরা মুহাজির। তারপর তারা আমাকে মুখ বন্ধ করতে বলে আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে থাকি। আব্বা ধরা পড়ার সাথে সাথে জোরে জোরে কালেমা পড়তে থাকেন। অকবার কালেমা পড়ার জন্য তাঁকে জোরে জোরে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারতে থাকে। অব্বার বয়স প্রায় ৮০/৮৫ বছর। তারপর তিনি ধীরে ধীরে কালেমা পড়তে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারতে থাকে এবং বলতে থাকে কালেমা মাত কর। আমাদের ঐ অবস্থা দেখে আম্মা কান্নাকটি করতে থাকেন। অম্মার কান্নাকাটি করা দেখে একজন মিলিটারী বাসার মধ্যে চলে যায় এবং আম্মাকেও বন্দুক দিয়ে বাড়ি মারে তার হাতের রিঙ খুলতে চেষ্টা করলে অন্য একজন মিলিটারী গিয়ে তাঁকে বাধা দেয় এবং সেখান হতে তাকে বাসার বাইরে নিয়ে আসে। আমার হাত এবং আব্বার হাত একত্র করে বেঁধে ফেলে। তারপর আমাদেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ১০/১২ গজ হাঁটিয়ে নিয়ে এসে এক জায়গায় বসতে বলে। আমরা বসে পড়ি। এর মাঝে আমি পানি চাইলে আবার এসে মারা আরম্ভ করে। তারপর আমরা সেখানে বসে থাকি। তার ৪/৫ মিনিট পর আরও ৮/১০ জন লোককে ধরে মারতে মারতে আমাদের নিকট নিয়ে এসে রাখে। তারপর তারা সবাই একত্রিত হবার পর তাদের মধ্যে থেকে একজন মিলিটারী বলে ওঠে এ তো বুডা একে নিয়ে কি হবে। আমাদের মধ্যে একজন ছোট ছেলে ছিল তাকে এবং আমার আব্বাকে তারা ছেড়ে দেয়।তার প্রায় আধা ঘন্টা পর আমরা গাড়ির শব্দ পাই। একটা গাড়ি এসে আমাদের সম্মুখে থামে এবং মিলিটারীরা নিজেরাই ধরাধরি করে আমাদেরকে গাড়িতে উঠায়।তারপর গাড়ি ছেড়ে বেশ কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থেমে পড়ে। আমাদেরকে গাড়ী হতে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে ফেলে। তারপর একটা ঘরের দরজার নিকট নিয়ে গিয়ে আমাদের সবার চোখ খুলে দেয় এবং ঘরের মধ্যে আমাদেরকে ঢুকিয়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আমরা ঢুকে সবাই সবাইকে এক নজর দেখে নিলাম। তার পাই প্রায় ২০/২৫ জন লোককে মারতে মারতে পায়খানায় নিয়ে যাচ্ছে আবার মারতে মারতে পায়খানা হতে নিয়ে আসে। তারপর আমাদেরকে পায়খানা করার জন্য বাইরে নিয়ে যায়। পায়খানা করা হলে সবাই অজু করে নেবার পর আবার উক্ত জায়গায় নিয়ে এসে রেখে দেয়। আমরা সবাই নামাজ পড়ে বসে আছি এমন সময় পাশের ঘর হতে মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। তাতে আমরা ধারণা করলাম ওখানে মার আরম্ভ করে দিয়েছে। এর মধ্যে একজন মিলিটারী আমাদের রুমে চলে আসে এবং প্রত্যেকের পুরা ঠিকানা ও প্রত্যেকের পেশা একটা কাগজে লিখে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। আমরা খাবার পর একজন লোককে ঘর হতে বের করে নিয়ে যায়। তার সাথে কি যেন বলাবলি করার পর আবার আমাদের রুমে তাকে নিয়ে এসে রেখে যায় এবং আমাদের সবাইকে জানিয়ে যায় তোমরা কোন লোক বদরউদ্দিন সাহেবের সাথে কথা বলবে না। যদি কোন লোককে