পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Soa বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Ջ Գ լ মোঃ মোহসিন উল্লাহ গ্রাম-চৌগাছা ১৯৭১ সালের ১৫ই অক্টোবর ২০/২৫ জন পাক মিলিটারী রাত প্রায় ১১টায় আমাদের বাড়ীতে চলে যায়। আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে আমাকে নাম ধরে ডাকলে আমি ঘর হতে বেরিয়ে আসি। সঙ্গে সঙ্গে দুজন পাকসেনা আমার দু’হাত ধরে ফেলে এবং গামছা দিয়ে পিঠমুড়া করে দু’হাত বেঁধে ফেলে দেয়। তারপর ঘরের মধ্যে ঢুকে যায় এবং একজন চাকর ঘরের মধ্যে শুয়ে ছিলো তাকেও ধরে ফেলে এবং আমার নিকটে নিয়ে আসে। একজন সুবেদার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তোমার ভাই মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার? তোমার গ্রামে কয়জন মুক্তিবাহিনী আছে? তুমি মুক্তিবাহিনীকে আমাদের খবরাখবর পৌছে দাও? তাদের সবগুলো কথার জবাব আমি অস্বীকার করি। তারপর আমাকে হুমায়ূন কবির নামে একজন পাঞ্জাবী ফোন অপারেটার ৪/৫ টা ঘুষি মেরে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর আমাকে মোটা একটা মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার নয়। তারপর আরও ৮/৯ জন মিলিটারী আমার নিকটে চলে আসে এবং তারা প্রত্যেকে কোন কথা জিজ্ঞাসা না করে বুট দিয়ে লাথির পর লাথি মারতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন ছোট ১২/১৪ বছরের বিহার ছেলে ছিল। সে আমাকে ২/৩ হাত দূর থেকে জাম্প করে এসে আমার বুকে আঘাত করে। তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।প্রায় একঘন্টা পর আবার জ্ঞান ফিরে পেলে আমাকে স্কুলের দোতালায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে একটা আকড়ার সাথে দু’হাত ঝুলিয়ে বেতের লাঠি দিয়ে সারা শরীরে বেদম প্রহার করার দরুন সমস্ত শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। প্রায় ১৫/২০ মিনিট আমাকে মারার পর আমি যে কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি তা আমি বলতে পারি না। তারপর জ্ঞান ফিরে পেলে আমি দেখতে পাই আমি একটা ঘরের মধ্যে পড়ে অছি। তারপর ৭ দিন আমাকে বিভিন্ন উপায়ে প্রহার করার পর আমি হাঁটতে চলতেও একস্থান হতে অন্যস্থানে সরে যেতে না পারার জন্য আমাকে প্রহার করা বাদ দেয়। আমি আধা মরা অবস্থায় ঘরের একটা কোণে পড়ে থাকি। আমাকে ধরার দুদিন পর আমার চাকরটাকে ছেড়ে দেয়। তারপর মেজর ২৬শে অক্টোবর আমাকে ডাকে। ৪/৫ জন মিলিটারী ধরাধরি করে আমাকে মেজরের সামনে এনে হাজির করে। মেজর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে তুমি সত্য করে বলো মুক্তিবাহিনী তোমাদের বাড়ীতে আসি কিনা? তোমার ভাই মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার কি না? তোমাদের গ্রামে কতজন ছেলে মুক্তিবাহিনী হয়েছে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি অস্বীকার করি। তারপর মেজর একজন সুবেদার ডাকে। উক্ত সুবেদার মেজরের নিকট আসলে মেজর তাকে আদেশ করে এই লোক কোন দোষী নয়। একে গাড়িতে করে তার বাড়ীতে রেখে এসো। তারপর আমাকে গাড়িতে করে আমার বাড়ী পৌছে দিয়ে আসে। অর্থাৎ ২৬শে অক্টোবর আমি ছাড়া পাই। তারপর আমি বাড়ী গিয়ে তিন মাস স্থানীয় চৌগাছ বাজারের একজন ডাক্তারের নিকট চিকিৎসায় ভাল হয়ে উঠি। এখন আমি চলে ফিরে খেতে পারি। কিন্তু কাজকর্ম করে খাবার মত কোন সামর্থ্য আমার নেই। এখনও মেঘ বৃষ্টি হলে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা বেদনা করে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। চৌগাছা সরকারী ডাক বাংলোর পিছনে ২০/২৫ টা কবরে প্রায় ৭০/৮০ জনকে প্রত্যেক দিন প্রায় ৮/১০ জন করে লোককে ব্যায়েনেট দিয়ে খুঁচিয়ে আধা মরা করে ২/৩ জনকে একই ছালার মধ্যে ভরে ছালার মুখ বেঁধে উক্ত কপোতাক্ষ নদীতে ফেলে দিয়েছে। উক্ত নদীর উপর একটা ব্রীজ আছে, সেখানেও নিয়ে গিয়ে ব্যায়োনেট