পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఎంఫి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լ Ֆ ԳՀ լ লুৎফর রহমান মোল্লা মিরপুর থানা, জেলা-কুষ্টিয়া আলমডাঙ্গা থানায় কাজ করছি এমন সময় একখানা পাক মিলিটারী গাড়ি গিয়ে থানা ঘিরে নেয় এবং আমরা থানার স্টাফ ৪ জনসহ মোট ১২ জন ধরা পড়ি। আমাদের প্রত্যেককে গাছের সঙ্গে দুই হাত বেঁধে এবং আমার সারা শরীর ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তারপর একজন মিলিটারী আমার বুকের উপর উঠে বুট চার্জ করে। তারপর ক্যাপ্টেন মুজাফফর হোসেন নাগভী আদেশ দেয়, ১২ জনকে ৬টা জোড়া করে দুইজন করে সামনা সামনি হাত বেধে হাট বোয়ালীয়া একটা নদীর ধারে নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে গিয়ে চোখ বেঁধে হাঁটু পানির ভিতর নামিয়ে গুলি করে দেয়। এইভাবে পাঁচ জোড়া গুলি করার পর সর্বশেষ জোড়ায় ছিলাম আমি ও আলমডাঙ্গা থানার ও, সি সাহেব। যখন আমাদেরকে গুলি করতে নিয়ে যায় সেই সময় ছানাউল্লাহ নামক একজন কনষ্টেবল এবং ইব্রাহিম নামক একজন কসাই ও, সি সাহেবের নিকট এসে বলেন যদি ১৫০০০ টাকা দেন আপনার জান বাঁচিয়ে দেব। সঙ্গে সঙ্গে ও, সি সাহেব সম্মতি জানানোর পর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে তাঁর হাতের বাঁধন ছেড়ে দেয় এবং তাঁকে ক্যাপ্টেনের গাড়িতে নিয়ে উঠায়। তারপর আমাকে গুলি করার জন্য চোখ বেঁধে হাঁটু পানির মধ্যে নিয়ে দাঁড় করায়। তখন আমি ক্যাপ্টেন সাহেবকে বলি স্যার আমার একটা ফরিয়াদ আছে। আমি কোন দোষ করি নাই, বিহারীরা আমার নামে মিথ্যা বলে আপনার নিকট আমার সম্বন্ধে বলেছে। তখন ক্যাপ্টেন আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয় এবং বলে আগামীকাল এর বিচার করা হবে, আজ একে থানায় একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে রেখে দাও। দুইজন মিলিটারী আমাকে নিয়ে এসে একটা ঘরের মধ্যে রেখে দেয়। ঘরটার দরজা ভাঙ্গা ছিল। তারপর পাকসেনারা ৪/৫ জন মেয়েকে থানায় নিয়ে আসে এবং তাদেরকে নিয়ে তারা আনন্দ উল্লাসে মত্ত থাকে। এদিকে রাত্ৰিতে মুষলধারে ঝড় আর বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। তখন আমি চিন্তা করি। আমাকে তো আগামীকাল গুলি করে মারবে, তাই শেষ চেষ্টা করলাম অর্থাৎ দরজাটা একটু জোরে প্রেশার দিলে দরজা খুলে যায়। আমি অমনি চোরের মতন ধীরে ধীরে ঘর হতে বেরিয়ে একটা খালের ধার দিয়ে খোলা মাঠের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রি চলার পর ভোর হয়ে গেলে একটা বৃদ্ধ লোককে দেখতে পাই। তাকে দেখে আমি জড়িয়ে ধরি এবং বলি বাবা আমাকে কিছু খেতে দেন। লোকটি আমাকে তার বাড়ী নিয়ে যায় এবং আমাকে খেতে দেয়। তারপর আমি ভারতে আশ্রয় নেই। এরপর যশোর ক্যান্টোনমেন্ট আমাদের দখলে এসে গেলে আমি একদিন রাত্রি বেলা বাড়ীতে যাই। গিয়ে আমার ছেলেকে ডাকি আমার স্ত্রী দরজা খুলে দেয়। তখন আমি দেখতে পাই আমার স্ত্রী বিধবার কাপড় পড়ে আছে এবং তার গায়ের অলঙ্কার বলতে কিছুই নেই। আমাকে দেখে সে কেদে ফেলে এবং বলে আমি যেদিন শুনতে পাই তোমাকে পাক বাহিনী মেরে ফেলেছে সেই দিন হতে আমি বিধবার কাপড় পরিধান করেছি। তারপর আমি আমার সমস্ত ঘটনা খুলে বলি।