পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՏ O বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড I め「l○ l শ্ৰী সংকর প্রসাদ ঘোষ গ্রাম-আউড়িয়া, পোষ্ট-হাট বাড়ীয়া যশোরের চৌগাছায় পাকসেনাদের হাতে আমরা ধরা পড়ি। পাকসেনারা চৌগাছার হাইস্কুলে আমাদেরকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদের ঘড়ি টাকা পয়সা সব কিছু নিয়ে নেয়। তারপর প্রথমে আমাকে, জামা ও প্যান্ট খুলে, দু’জন পাকসেনা বাঁশের লাঠি দিয়ে সারা শরীরে প্রহার করতে থাকে। এই ভাবে প্রায় এক ঘণ্টা প্রহার করার পর আমার দুপা বেঁধে একটা আকড়ার সাথে পা উপর দিয়ে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে সমস্ত শরীরে প্রহার করতে থাকে মেজর তখন চেয়ার পেতে বসে আছে। আর একদল আমাকে প্রহার খাঁন জিন্দাবাদ। আমার সমস্ত শরীর হতে রক্ত ঝরতে থাকে তারপর যে কি হয় আমি বলতে পারি না। প্রায় তিন ঘন্টা পর আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখতে পাই আমার পাশে আমার দু’বন্ধু ইলিয়াছ ও সুনিল কুমার বসু ফুলে যায়। আমরা পানি খেতে চাইলে প্রশ্রাব এনে সামনে দিত। তার গন্ধ পেয়ে আমরা মুখ বন্ধ করতে থাকলে ইট নিয়ে এসে মুখে মারতো। সন্ধ্যার পর আমাদেরকে স্কুলের পিলারের নিকট নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে গিয়ে তিনজনকে তিনটা পিলারে পিঠমুড়া করে জড়িয়ে চেপে বাঁধে। আর মাজার সাথে পিলারে বেষ্টন দিয়ে বেঁধে ফেলে আবার প্রহার করতে থাকে। আমরা তৃষ্ণায় পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকি। তখন বৃষ্টি নামে। উক্ত বৃষ্টির পানি আমাদের মাথায় পড়তে থাকে। উহা আমাদের শরীর বেয়ে পড়তে থাকে উক্ত পানি খেয়ে আমরা তৃষ্ণা নিবারণ করি। তারপর দিন, হাত পায়ের রশি খুলে দেয় এবং আবার পিটাতে থাকে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে, তোমরা মুক্তিবাহিনী কিনা? এবং ট্রেনিং জানো কি না? তখন আমরা বলি, না, আমরা ট্রেনিং জানিনা ও আমরা মুক্তিবাহিনীও নই। তারপর মারা বাদ দিয়ে পাকসেনারা ৩/৪ জন আমাদেরকে ধরাধরি করে তাদের গাড়িতে তুলে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে নিয়ে আমাদেরকে একটা ঘরে বন্দি করে রাখে। তার ১০/১৫ মিনিট পর একজন হাবিলদার ও ৭/৮ জন মিলিটারী আমাদের নিকট আসে এবং আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে, সত্যি করে বল, ভারতে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং-এ যেতে ছিলে কিনা এবং অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে। তারপর আমরা তাদের কার কোন জবাব দেইনি। তারপর আমাদের হাত আবার পিঠমুরা করে পিলারের সাথে বেঁধে ১০/১৫ মিনিট সময় দিয়ে বলে যে এর মধ্যে যদি সত্যি কথা না বলো তা হলে গুলি করে হত্যা করবো এই বলে আমাদের দিকে বন্দুক ধরে রাখে। আমরা জবাব দেই যে আমরা সত্যি বলছি আমাদের লোক হাড়িয়ে গিয়েছে তাদের খোঁজে আমরা এখানে এসেছি। আমরা ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে এখানে আসি নাই। তারপর আমাদের তিনজনকে একটা ঘরের মধ্যে ১৫ দিন রেখে দেয়। ঐ কয় দিনের প্রত্যেক দিনই খাবারের সময় এবং পায়খানা প্রশ্রাবের সময় কিল, ঘুষি লাথি, ইত্যাদি খেতে হতো। তারপর সেখান হতে যশোর কোতায়ালী থানায় পাঠিয়ে দেয়। ওখানে এক রাত্রি থাকার পরদিন কোটে ৫৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে যশোর সেন্ট্রাল জেলের হাসপাতালে রেখে দেয়। সেখানে বাঙ্গালী চিকিৎসক ছিলেন তারা আমাদেরকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। সেখানে ১২ দিন থাকার পর কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি লাভ করি। তারপর বাড়ী এসে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠি। জুন মাসের ২০ তারিখে আমরা ধরা পড়ি এবং সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে যশোরের প্রথম শ্রেনীর মেজিষ্ট্রেট শেখ আবদুল্লা সাহেবের কোর্ট থেকে মুক্তি পাই। স্বাক্ষর /শ্ৰী সংকর প্রসাদ ঘোষ التي H - يا ـ لسان