পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll ΣbrΣ ll মিঃ মানিক মিঞা (পুলিশ) ২৯শে মার্চ আমি যশোর জেলার কোতয়ালী থানার বসন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ি হতে পাক বাহিনীর আক্রমণের খবর পেয়ে সেখান হতে লোহাপাড়া থানার অন্তর্গত কালনা নামক গ্রামে গিয়ে এক মাস অতিবাহিত করি। সেখান হতে পুনরায় লোহাগড়া থানায় চলে আসি। মে মাসের ৯ তারিখে আমি আমার এক আর্তীয়ের খোঁজে যশোর শহরে চলে আসি। যশোর শহরের দড়টানায় আমাকে এক বিহারী দেখে বন্দি করে। এবং আমাকে ক্যান্টনমেন্টে পাক সেনার নিকট পৌছে দেয়। ক্যান্টনমেন্টে পৌছার পর মিলিটারি সুবেদার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে- মুক্তি বাহিনী কোথায়? তারা কোথায় ট্রেনিং নেয়? আমি তার প্রশ্নের পায়ে, হাতে ও পিঠে প্রহার করতে থাকে। এবং প্রহার শেষে হাত, পা, বেঁধে আমাকে রৌদ্রে মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে। এই ভাবে ৩/৪ ঘণ্টা রৌদ্রের মধ্যে রাখার পর আবার ঘরে নিয়ে যেত। এবং আমার চারিদিকে প্রহরী রেখে আমাকে কাজ করাত। কাজ করার মাঝে মাঝে লাঠি দেয়ে আথবা বন্দুকের বাঁট দিয়ে পিঠে আঘাত করতো। দিন রাতের মধ্যে অনুমান দু’ছটাক চাউলের ভাত খেতে দিত। আমার চোখের সামনে ৮/১০ জন লোককে শুধু লাঠি দিয়ে পিটাতে পিটাতে মেরে ফেলে দেয়। অনেক লোককে বিকাল ৬টার পর হতে চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে গাড়ীতে উঠিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে যেত। হাজত থেকে কিছু লোক তাঁদের দিয়ে গর্ত খোঁড়াতো এবং যাদের গাড়ীতে করে নিয়ে যেত তাদেরকে লাইন করে গুলি করে হত্যা করতো। এই ভাবে প্রত্যেক দিন রাত্রিতে মিলিটারীরা গণহত্যা করতো। আমি এক মাস ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। আমি যে কয়দিন ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম ঐ কয়েক দিন তারা অনুমান ৭/৮ শত লোককে বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করেছে। আমার উপর নির্যাতন চালানোর পর আমার গুলির অর্ডার হয়ে যায়। আমি উক্ত খবর আমার স্ত্রী নিকট ক্যান্টনমেন্ট হতে লোক মারফত পাঠিয়ে দেই। তারপর আমার স্ত্রী একজন পাঞ্জাবী হাবিলদারের নিকট এক জন লোক নিয়ে যায়। এবং তাঁকে অনেক অনুরোধ করার পর তিনি মেজরের নিকট গিয়ে আমার জন্য সুপারিশ করে। তারপর মেজর আমাকে ডেকে বলে আমি তোমাকে হাবিলদারের অনুরোধে মুক্তি দিলাম। হাবিলদারটার নাম ছিল কোরবান খান। মুক্তি দেবার সময় আমাকে মেজর বলে দিলেন তুমি এখনই পুলিশ লাইনে গিয়ে হাজির হবে। যদি হাজির না হও, তা হলে তোমাকে গুলি করে মারা হবে। তারপর দুজন রেঞ্জার পুলিশ আমার সঙ্গে দিয়ে আমাকে পুলিশ লাইনে পৌছে দেয়। সেখানে বিহারী সুবেদার আমির হোসেন সাহেবের নিকট আমাকে হাজির করেন। আমি সেখানে হাজির হয়ে ছুটির জন্য দরখাস্ত করি। দরখাস্ত মঞ্জর না করে আমাকে মনিরামপুর থানায় পোষ্টিং করে। এখানে এসেই আমার অসুখ হয়। তিন মাস অসুখ অবস্থায় কাটাই। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। মানিক মিঞা 8/8/ab