পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨૨ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l >brs l মোঃ শহিদুল ইসলাম থানা-শারসা জেলা-যশোর ১৫ই আগষ্ট ভোর রাত চারটায় সময় আমাকে এক জন রাজাকার নাভারণ বাজার হতে ধরে এবং রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই আমাকে উক্ত রাজাকার বেতের লাঠি দিয়ে ভীষণ প্রহার করে। এরপর সেক্রেটারীর নির্দেশে আমার চোখ বেঁধে মটরে তুলে যশোর ক্যান্টনমেন্টে চালান দেয়। সেখানে নিয়ে চোখ খুলে দেয় এবং মেজরের নিকট আমাকে হাজির করে। ৪/৫ জায়গায় ষ্টেটমেন্ট দেবার পর আমাকে ক্যান্টনমেন্টে এফ, আই, ও, তে হাজতে আটকিয়ে রাকে। প্রত্যেক দিন সকাল এবং বিকালে হাজত হতে বের করার সময় এবং হাজতে ঢুকানোর সময় প্রত্যেককে ভীষণ প্রহার করতো। আমাকে হাজত হতে বের করার সময় এবং হাজতে ঢুকানোর সময় প্রত্যেককে ভীষণ প্রহার করতো। আমাকে হাজত হতে বের করে বাহিরে নিয়ে যেত এবং প্রথমে বেতের লাঠি দিয়ে প্রহার করার পর বুট দিয়ে লাথি, চড়, কিল, ঘুষি, বুট দিয়ে শরীরের উপর উঠে খচিত এবং সর্বশেষে পায়ের তলায় রুল দিয়ে প্রহার করার পর সিগারেটের আগুন শরীরের বিভিন্ন স্থানে চেপে ধরতো। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করতো, সত্যি করে বলো, তোমার সাথে কে কে ছিল। তারপর আমার শরীর হতে এক পাউণ্ড রক্ত নিয়ে হাজতের মধ্যে রেখে দেয়। এই ভাবে আড়াই মাস আমাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে রাখার পর নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমাকে সেখান হতে যশোর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেন্ট্রাল জেলে আসার পরপরই আমার সমস্ত শরীর ফুলে যায় এবং যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকি। ঐ মাসের শেষের দিকে এক জন মেজর কয়েকজন মিলিটারীকে সঙ্গে করে সেন্ট্রাল জেলে চলে আসে এবং আমাদের ২০/২৫ জনের প্রত্যেকের শরীর হতে এক পাউণ্ড করে রক্ত নেয়। তারপর ডিসেম্বরের ৭ তারিখে যশোর হতে পাঞ্জাবী সৈন্যরা অন্যত্র চলে যায়। ঐ দিন যশোর শত্রমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী জেল খানার তালা খুলে দিলে আমরা জেল হতে বের হয়ে আসি। এবং সেই দিনই আমি বাড়ী চলে আসি। আমি প্রায় দরুন মারা যায়। এবং প্রত্যেক দিন সন্ধ্যার পর হাজত হতে ২০/২৫ জন করে লোককে বের করে নিয়ে যেত, তাদেরকে আর ফিরে আনতো না। এই ভাবে বহু লোককে তারা বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করেছে। স্বাক্ষর/মোঃ শহিদুল ইসলাম ২২/৪/৭৩