পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&○br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | აჯაყy | ভারতী দেবী চক্রবর্তী বগুড়া রোড, বরিশাল ১৮ই এপ্রিল বরিশালে পাক সেনারা ব্যাপক বোমা ফেলে। আমরা আশ্রয় নিই আলুকদিয়া গ্রামে। ওখানে এক মাস থাকি। আমার স্বামী বরিশালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। এই সংবাদ প্রচার হয়ে গেলে গৃহস্বামী আমাদের রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। শুনলাম হিন্দুরা সব আটঘর কুড়িয়ানাতে আশ্রয় নিচ্ছে। স্থান ছিল দুর্গম, চারিদিকে জল, খানসেনা যেতে পারবে এমন ধারণা কারো ছিল না। আমরা কুড়িয়ানাতে আশ্রয় নিই। ওখানে পর পর ৩৬টি গ্রাম সম্পূর্ণ হিন্দুর বাস। মে মাসে আমি আটঘর কুড়িয়ানাতে আশ্রয় নিই। আমরা অরুণ চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ীতে থাকি। ওখানে আরও প্রচুর লোক আশ্রয় নেয়। মে মাসের শেষের দিকে খানসেনারা কুড়িয়ানাতে পৌছে অরুণ চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ী ঢুকে মন্দির, ঘর সব ধ্বংস করে ওখানে পাক ছাউনী করে। সমস্ত গ্রাম খান সেনারা পুড়িয়ে দেয়। আমরা ২/৩ হাজার লোক পিয়ারা বাগানে আশ্রয় নিই। খান সেনারা বাগান কাটা শুরু করলো। আমরা বাগানের খালের জলের ভিতর বেলা ১০টায় নামতাম, বেলা ৪/৫ টার দিকে জল থেকে উঠে বাগানের উচু জায়গায় বসতাম। সকালে এসেই খান সেনারা গুলি চালাতো। যারা একটু আঘটু মাথা উচু করেছে সাথে সাথে মারা গেছে। ঐ ভাবে দেড় মাস থাকি। দেড় মাসের মধ্যে আমরা ভাত খেতে পারিনি, পেয়ারা এবং আখের রস খেয়ে ছিলাম। বাগান কাটতে থাকে আমরা পিছাতে থাকি। জোয়ারে অসংখ্য মৃতদেহ দেখতাম। মৃতদেহের উপর আমরা বহুবার আশ্রয় নিই। পাকসেনারা প্রত্যহ মানুষ ধরে ধরে হত্যা করেছে। ঐ বাগানে লাইন দিয়ে দেড় মাসের মধ্যে ২ হাজারের মত লোককে হত্যা করে। ওখানে আমাদের মত যারা আশ্রয় নিয়েছিল তারাই বেশী মারা গেছে। লাইনে দাঁড় করিয়ে আমাদের সবকিছু খুলে নেয়। পাশবিক অত্যাচার চালায় অসংখ্য নারীর উপর। আমার স্বামীকে ধরে ফেলে পাক সেনারা নৃশংসভাবে হত্যা করে। গ্রামে, গঞ্জে রাজাকাররা আমাদের উপর চালিয়েছে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকি। স্বাক্ষর/ভারতী দেবী চক্রবর্তী ২০/৯/৭৩