পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8o বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Տի,br lլ উপেন্দ্রনাথ দত্ত গ্রাম-রাজার হাট ডাকঘর ও থানা-পিরোজপুর ৪ঠা মে, পাক বাহিনী পিরোজপুর আসে। খান সেনারা শহরে প্রবেশ করে দালাল শ্রেণীর কতকগুলি লোককে শহর লুট করতে বলে। এই সময় তাদের নির্দেশ দেয় যে তোমরা লুট করো কিন্তু ঘর দুয়ার নষ্ট করো না। পাক বাহিনী রাস্তায় যে সব লোকদের পায় তাদেরই সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। প্রথম অবস্থায় হিন্দু, মুসলমান, কোন কিছু তারা নির্ণয় না করে একাধারে সবাইকে গুলি করে মেরেছে। একজন দালালের কাছে আমি এই সময় বলি যে ভাই আমার দোকানে প্রায় লাখ টাকার মাল আছে, তুমি এগুলি রক্ষা করো। প্রয়োজন হলে তোমার হেফাজতে নিয়ে নাও। তার উত্তরে সে আমাকে জানায় যে আপনার কোন চিন্তা নাই। আপনার কোন ক্ষতি আমরা করবো না। আমি আমার সমস্ত কিছু তার কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নদীর অপর পারে চলে গেলাম। আমি সারাদিন নদীর অপর পারে পালিয়ে বেড়াতাম। বিকালের দিকে যখন খান সেনারা তাদের ব্যারাকে ফিরে যেত তখন আমি নদী পার হয়ে টাউনের ভিতর চলে আসতাম। এবং যতদূর সম্ভব গা ঢাকা দিয়ে শহরের ভিতর ঘুরে ঘুরে অবস্থা দেখতাম। পাক বাহিনী আসার পর পাক বাহিনীদের সহযোগী একটা দল সৃষ্টি হয়। পরবর্তী কালে এই দলই বিভিন্ন অত্যাচারের ক্ষেত্রে পাক বাহিনীকে পরিচালনা করেছে। প্রথম দিকে পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে লুট করেছে, পরবর্তী পর্যায়ে বাড়ী ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায় এবং জুলিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। মে মাসের শেষের দিকে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক ধরে এনে পিরোজপুর জেটি ঘাটে এনে গুলি করে হত্যা করেছে। এমন দিন ছিল না যে ৫০/৬০ জন লোক হত্যা না করেছে। পাক বাহিনী গড়ে প্রত্যেক দিন ১০০ শত করে লোককে হত্যা করেছে। প্রথম দিকে যখনই লোক ধরে আনতো তখনই দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছে। ২য় পর্যায়ে পাক বাহিনী যে সব লোককে ধরে আনতো তাদেরকে সন্ধ্যার পরে গুলি করে মেরেছে। প্রথম দিকে যে সব লোক মারা হত তাদের বেশির ভাগ গুলি করেই হত্যা করেছে। শেষের দিকে যে সব লোককে ধরে আনতো তাদের প্রথম ভীষনভাবে মারধর করতো তারপর বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করতো। অনেক সময় আমি নিজ চোখে দেখেছি যে দুইজন দুই দিক থেকে একটা লোককে পা টেনে ধরতে আর একজন কুঠার বা দা দিয়ে কুপিয়ে দুই ভাগ করে ফেলতো। ইয়াহিয়া খানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার থেকে দুই চারজন ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার শহরে আসতে শুরু করে। যারা এই সময় শহরে আসতো তাদের প্রত্যেককেই শান্তি কমিটির কাছ থেকে পাকিস্তানী ব্যাজ শরীরে লাগিয়ে নিতে হতো।