পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8Ֆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড রাত্রি সাড়ে ১২টার সময় ক্যাপ্টেন আমাকে পুনরায় তার চেম্বারে ডেকে পাঠায়। আমার তখন ভয় হয়ে যায় যে আমি প্রথমে একা রুটি খেতে চাইনি বলে হয়তো তার রাগ হয়েছে। কাজেই আমাকে মেরে ফেলবে। একজন সিপাই আমাকে নিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেবের সম্মুখে হাজির করে আমাকে দেখতে পেয়ে ক্যাপ্টেন পুনরায় জিজ্ঞাসা করে তুমি খেয়েছো। আমি বলি যে হাঁ আমি এই মাত্র রুটি মাংস খেয়েছি। ক্যাপ্টেন পুনরায় হেঁকে ওঠে যে না আবার তোমাকে আমার সম্মুখে খেতে হবে এই বলে ডাকাডাকি আরম্ভ করে। একজন সিপাই দুইটি পরটা ও একটা আস্ত মুরগীর রোষ্ট নিয়ে আসে। ক্যাপ্টেনের হুকুমে আমি তা খেয়ে ফিলি। পরে আমাকে পুনরায় আরাম করার জন্য হাজত রুমে নিয়ে আসে। পরের দিন সকালে আমাকে পুনরায় ক্যপ্টেনের রুমে ডেকে নিয়ে আসে এবং আমাকে কিছু খেতে দেয়। এই সময় ক্যাপ্টেন আমাকে বলে যে এখন তুমি বাড়ী যাও এবং ঠিকঠাকমত চলাফেরা করবে। আমি বাড়ীর দিকে চলে আসি এবং বাড়ীতে না গিয়ে রাত্রিতে আর সব বন্দি যে সব কথা বলে দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বাসায় গিয়ে আমি তা বলে আসি। এই সময় যে ছেলেটিকে হুলার হাট থেকে ক্যাপ্টেন ধরে আনে তার খালুর সঙ্গে দেখা করি বলি যে বন্দী আশরাফ আমার কাছে কাকুতি মিনতি করে বলে দিয়েছে যে তাকে যদি গুলি করে হত্যা করা হয় তবে যেন তার আত্মার সৎ গতি করা হয়। রাত্রিতে আমার ঘুম আসছিল না কাজেই বসে নানা চিন্তা করছি এমনি সময় জেটিঘাটে দশ রাউণ্ড গুলির শব্দ পেলাম। পরের দিন সকালে উঠে খবর নিয়ে জানতে পারি যে যাদের বন্দী করে রেখেছিল তাদের সবাইকে রাত্রিতে গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আমার বন্দী আশরাফের করুণ স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে এবং আমি দৌড়িয়ে জেটি ঘাটে চলে আসি। জেটি ঘাটে বেশ কয়েকটি লাশ দেখতে পাই কিন্তু আশরাফের লাশ দেখতে পাই না। একজন নৌকার মাঝির সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারি যে নদীর ভাটিতে কিছু দূরে দুইটা লাশ ভেসে আসে। আমি জেটি ঘাটে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং নদীর ভিতর দিয়ে সাঁতার কেটে লাশের কাছে আসি এবং নিজ হাতে আলী আশরাফের লাশ তুলে নিয়ে তার বাবা-মার কাছে হাজির করি এবং তার শেষ অনুরোধের কথা জানাই। লাশ দেখে তার বাবা-মা ভয় পেয়ে যান যে মিলিটারী জানতে পারলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। আমি নিজে সারাদিন গোপনে সে লাশ লুকিয়ে রেখে রাত্রিতে কয়েকজন লোক ডেকে লাশ মাটির ব্যবস্থা করি। আমি শহরে বাস করতে থাকি এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে ক্যাপ্টেন এজাজ ছুটি নিয়ে পাকিস্তানে চলে যায় বিবাহ করতে। তখন ক্যাম্পের চার্জে সুবেদার সেলীম থাকে। এই সুবেদার তখন দালাল নিয়ে এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলো। ব্যাপক হারে মেয়েদের ধরে এনে ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষন করতে লাগলো। হিন্দু মুসলমান বলে কোনো বিচার তখন ছিল না- যেখানে যাকে পায় তাকেই ধরে আনতে থাকে। দেখতে দেখতে শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে গেল। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে আমার বাসার সম্মুখে থেকে দুটি সিপাই আমাকে ডেকে নিয়ে যায় যে তোমাকে সুবেদার সাহেব বোলাতা হ্যায়। আমাকে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গিয়ে সুবেদার বলে যে আমি তোমার জীবন নেব, তুমি আমাদের বঙ্গে বহুত দুশমনী করছো। এই বলে তারা আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। আমাকে মারতে মারতে সারা শরীর রক্তাক্ত করে ফেলে এবং এসডিও সাহেবের পায়খানার মধ্যে আটকে রাখে। ৬ দিন আমি সেখানে বন্দী থাকি। এই সময় আমি দেখতে পাই যে খান সেনারা প্রত্যেক দিন ক্যাম্পের সম্মুখে বাঙ্গালীদেরকে কয়েকজন মিলে শূন্যে তুলে পাকা রোডের উপর আছড়িয়ে মারতো বা এইভাবে আধা মরা