পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ8br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Հo Ջ եւ রেনুবালা বারুই গ্রাম- বাইনকাঠি ডাকঘর- নাজিরপুর পাকসেনা প্রথম আমাদের গ্রামে যায় শ্রাবণ মাসে। আমি তখন গোবৰ্দ্ধন গ্রামে স্বামির বাড়ী ছিলাম। কাঠালিয়া গ্রাম, বাইনকাঠি, তারাবনে গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। গ্রামকে গ্রাম লুট করে বাড়ীঘর সব ভেঙ্গে নিয়ে গেছে, জুলিয়ে দিয়েছে। অসংখ্য হিন্দু লোককে জোর করে মুসলমান করেছে। অসংখ্য লোককে হত্যা করেছে। বহু মেয়েকে পাকসেনারা ধরে পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। প্রায়ই ঘরের মেয়েকে পাকসেনারা ধর্ষণ করেছে। তিনজন মেয়েকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায় তাদের ছাউনী নাজিরপুর থানার পাশে সাত কাছিমা নামক স্থানে মাদ্রাসাতে। ক্রমাগত সাত আট দিন অসংখ্য রাজাকার তাদের উপর অত্যাচার চালায়। দিনের পর দিন দৈহিক অত্যাচার চালায়। রাজাকাররা তাদের ছাউনীতে আরও বহু মেয়ে রাখতো এবং দিনে রাতে ভোগ করতো। দেশ মুক্ত হলে অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি বাহিনীরা মেয়ে তিনটিকে উদ্ধার করে। আমার স্বামী কৃষক ছিলেন, জমি চাষ করা ফসল ফলানো তার কাজ ছিল। যুদ্ধ বাঁধলে আমার খুড়তুতো শ্বশুর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। আমার স্বামীও উৎসাহ ভরে মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখান। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় গেছেন অপারেশনে। ২৭শে আষাঢ় গোবর্ধন স্কুলের পাশে মুক্তিসেনাদের সাথে আমার স্বামীও ছিলেন। দলে প্রায় ৫০০ মত ছিল। ঐ দিন পাকসেনা রাজাকার মিলে ৭০০/৮০০ ছিল। তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিসেনারা তাদের ভারী অস্ত্রের সামানে টিকতে ব্যর্থ হয়ে পিছু হটে। সেই সময় আমার স্বামী পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। আমার স্বামী সহ আরও ৬ জনকে ধরে। সাত জনের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা আমার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এবং অত্যাচার চালায়। শিকদার বাড়ীর সবাইকে হত্যা করে। তারপর বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যাই। গ্রামের পর গ্রামে ঘুরে পালিয়ে বেড়িয়েছি। আজ আমি অসহায় নিঃস্ব সর্বহারা। যেখানে গেছি সেখানেই দেখেছি পাক বর্বর আর পশু রাজাকারদের অত্যাচারের বীভৎস রূপ। আজ দেশ স্বাধীন কিন্তু আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলতে পারেন? স্বাক্ষর/রেনুবালা বারুই ২০/৮/৭৩