পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l >○○ l যতিন্দ্ৰ নাথ মণ্ডল গ্রাম- শশীদ থানা- স্বরূপকাঠি জেলা- বরিশাল ১৭ই বৈশাখ পাক বাহিনী গানবোট নিয়ে ঝালকাঠি দিয়ে কাটাখালী নদী দিয়ে শশীদের হাটে আসে। তারা এসে হাটের পাশে গানবোট রেখে গ্রামের উপর নেমে পড়ে। পাক বাহিনী গ্রামের ভিতর প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের নারী-পুরুষ প্রাণের ভয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে চেষ্টা করে। পাক বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে প্রথমে দামী দামী জিনিসপত্র লুটতরাজ করে এবং পরে ৯খানা বাড়ী অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে দেয়। ঐ দিন ২ জন লোককে তারা গুলি করে। এদের একজন সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় আর একজন গুরুতর রূপে আহত হয়। ২৬ বৈশাখ পাক বাহিনী ও রাজাকাররা পুনরায় আমাদের গ্রামে আসে। তারা গানবোট ও স্পিড বোট নিয়ে ছোট খাল দিয়ে গ্রামের ভিতর ঢুকে পড়ে। মতিলাল দেবনাথ (ব্যানাজী) ও হিরালাল দেবনাথের কাপড়ের দোকান লুট করে স্পিড বোট বোঝাই করে কাপড় নিয়ে যায়। এই সময় মতিলাল দেব নাথ এর কাছ থেকে নগদ ১২০০০ টাকা নেয় এবং তাকে বেয়োনেট চার্জ করে পরে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই দিন আমাদের গ্রামে ১৮ জন লোককে পাক বাহিনী গুলি করে বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করে। এর মধ্যে জিতেন নামে একজনকে পাক বর্বর বাহিনী নারিকেল গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে তার পায়ের কাছে খরকুটো দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার সারা শরীর আগুন ধরে গেলে সে ভীষণভাবে চিৎকার করতে থাকে তখন পাক বর্বর বাহিনী গুলি করে তার মাথার অর্ধেক অংশ উড়িয়ে দেয়। এই ঘটনা তার স্ত্রীর সম্মুখে হয়। কেননা পাক বাহিনী তার স্ত্রীকে ধরে এনে তার সম্মখে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই সময় ক্ষীরদা সুন্দরী নামে বিধবা মেয়েকে পাক বাহিনী সারা শরীর বেয়োনেট নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ সময় আর এক মহিলা পাশের জঙ্গলের ভিতর পালিয়ে ছিল তার ছোট ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে। পাক বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এক গুলিতে ছেলে, মেয়েসহ তিন জনই মারা যায়। ঐ দিন আমাদের গ্রামের মোট চারখানা বাড়ী বাদে আর সব বাড়ী অগ্নিসংযোগ করে দেয়। ৫ই জ্যৈষ্ঠ পাক বাহিনী ঝালকাঠি থেকে গানবোট নিয়ে পুনরায় শশীদ হাটে আসে এবং হাটের উপর ক্যাম্প স্থাপন করে। ঐ দিনই পাক বাহিনী আমাদের গ্রাম থেকে ২ জন লোককে হত্যা করে। তার মধ্যে একজন ছিল স্থানীয় স্কুলের সেক্রেটারী কালী কান্তা মণ্ডল। এই সময় পাক বাহিনী স্কুলের লাইব্রেরী লুট করে এবং ভেঙ্গেচুরে সব তছনছ করে দেয়। এবং লাইব্রেরীর ভিতরে ছাত্রদের দেওয়া রিলিফের গম পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই গরমে আগুন নেভাতে গিয়েই সেক্রেটারী সাহেব গুলি খান। পাক বাহিনী এই সময় ১০ দিন শশীদ হাটে ক্যাম্প করে থাকে। এই সময় তারা ব্যাপক হারে নারী ধর্ষণ করে। একমাত্র আমাদের গ্রামের অনেক মেয়েকে পাকবাহিনী ধর্ষণ করে। পাক বাহিনী রাত্রিতে গ্রামের ভিতর ঢুকে মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে এবং কিছু কিছু মেয়েকে তারা ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং এক একজনের উপর পর পর কয়েকজন পাক পশু ধর্ষণ করে। এই সময় ১০ বছরের একটা ছোট মেয়েকে পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং একাধারে তার উপর চলে পাশবিক অত্যাচার। পাক বাহিনী চলে যাবার পর এই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। ৩ মাস পর্যন্ত এই ছোট মেয়েটি হাঁটতে পারতো না।