পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l a○ど l শ্ৰী ফনীন্দ্র ভূষণ পাল আমি পশ্চিম ঝালকাঠি গ্রামে গুরুচরণের পরিত্যক্ত বাড়ী হতে রাজাকার এবং পুলিশ দ্বারা ধৃত হই। পরে ঝালকাঠি থানার ওসি সেকান্দার সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়। উক্ত গ্রাম হতে আজহার নামক অপর এক ব্যাক্তিকে ধরে আনে। তাকে বেদম প্রহার করার ফলে তাঁর গুহ্যদ্বার দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। আমাকে থানায় নিয়ে আসে। সেদিন থানায় প্রায় ৪০ জন বন্দি ছিল। যাদের ধরে আনতো তাদের রাইফেল দিয়ে বেদম প্রহার করতো। এর ফলে আনেকের দাঁত, হাত, পা ভেঙ্গে যেত। প্রত্যেক দিন ভোর রাতে বন্দীদের থানা হতে কিছু দূর এক বদ্ধভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতো। রাতে গোপনে একটা কমিটি বসতো ধৃত ব্যাক্তিদের সম্পের্কে। যাদের ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করতো সেদিন আজহার ও তার পুত্র মক্তিফৌজ জনাব রশিদকে ধরে নিয়ে আসে। আজহার তাঁর পুত্রের চিন্তায় খাদ্য পরিত্যাগ করে। আমি তাকে বলি যে তোমার পুত্র দেশের জন্য শহীদ হচ্ছে এবং এটা বীরত্বের কথা, সুতরাং দুঃখ পাবার কিছুই নেই। তখন তার পুত্র রশিদ বলে যে আব্বা মরে তো যাবোই, কিন্তু যাবার পূর্বে তোমার সাথে একত্রে আহার করি। উক্ত পুত্র আমাকেও তার সাথে আহার করতে হলো এবং আমাকে তাঁকে আহার করিয়ে দিতে বলে। তখন আমরা একত্রে আহার করি। তখনকার সেই দৃশ্য সহ্য করার মতো ছিলো না। সে দৃশ্য অত্যন্ত করুণ ছিলো। সে আমাকে তার পিতাকে সাহায্য করার কথা বলে। পরে উক্ত ৪০ জনকে রাতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এরপর আমি বাড়ী যাই। পরে পাঞ্জাবী বাহিনী এসে পুনরায় শহরে লুটপাট শুরু করে এবং নারী ধর্ষণ বেশী করে। এরা মানুষকে হত্যা করে কবর দিতো। এর পূর্বে মানুষদের হত্যা করে নদীতে ফেলতো। কিন্তু তখন বিভিন্ন মিশন ঝালকাঠিতে আসতে থাকায় তাঁরা অনেক ভাসমান লাশ দেখে এবং পাক বাহিনীর অত্যাচার সম্পর্কে সন্দেহ করে। এই জন্য তাদের হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে পাক বাহিনী চেষ্টা করেছে তাদের কৃতকর্মের নজির চাপা দিতে। পাক বাহিনী সেই সময় শহরে অবস্থিত বহু পরিবারের নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর তাদের দালাল বাহিনী ধরে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। স্বাক্ষর/শ্রী ফনীন্দ্র ভূষণ পাল ১৫/৮/৭৩