পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড lこめの l আজহার আলী মিঞা গ্রাম- পশ্চিম ঝালকাঠি রশিদ ও মানিক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর দালালরা বন্দুকের বাঁট দিয়ে তাদের সমস্ত শরীরে আঘাত করে। আঘাত করার দরুন তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তারপর তাদেরকে ঝাল কাঠি থানায় নিয়ে আসে। থানায় কিল, ঘুষি, লাথি, এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান চাকু দিয়ে কুচা কুচা করে কেটে লবণ দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাজত ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে। আর ঐ দিনই ৩০/৪০ জন পুলিশ রাজাকার, মিলে মুসলীম লীগের দালালের নির্দেশে আমার বাসা ঘেরাও করে ৪/৫ রাউণ্ড গুলি করার পর বাসার মধ্যে প্রবেশ করে এবং আমাকে রোগশয্যায় শায়িত অবস্থায় ধরে ফেলে। এবং আমার বাড়ীঘর লুটপাট শুরু করে দেয়। তখন তাদের মধ্য হতে একজন হাবিলদার পুলিশ লুট করা বারণ করলে তারা লুট বন্ধ করে দেয়। তারা আমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা না করে এ্যারেষ্ট করে। ঝালকাঠি থানায় নিয়ে আসার সময় ঝালকাঠি খেওয়া ঘাটে তাছোনউদ্দিনের চায়ের দোকানে বসে আমার ঘাড়ে, হাঁটুতে, হাতের তালুতে ও পায়ের তালুতে এবং শরীরের প্রতিটি গাইটে রাইফেলের বট দিয়ে, বেতের লাঠি দিয়ে এবং বুট দিয়ে আঘাত করে যার দরুন শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এবং আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার ২০/২৫ মিনিট পর আবার জ্ঞান ফিরে পেলে একটা রিক্সায় করে আমাকে ঝালকাঠি থানায় নিয়ে আসে। যখন আমাকে প্রহার করতো তখন শুধু আমাকে বার বার বলতো এমন ছেলে জন্ম দিয়েছ যে সে আজ পাকিস্তানের শক্র আমি থানায় এসে দেখতে পাই যে, আমার ছেলে হাত পা বাঁধা অবস্থায় হাজতের মধ্যে আধমরা অবস্থায় পড়ে আছে। আমাকে থানায় নেবার পর আমার ছেলে রশিদ ক্যাপ্টেন আজমতের সাথে কথা বলতে চায়। একজন পুলিশ রশিদকে ক্যাপ্টেন আজমতের নিকটে নিয়ে যায়। রশিদ ক্যাপ্টেনকে জানায় যে, “আমি আপনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছি। কিন্তু আমার বৃদ্ধ পিতা তো আর আপনাদের সাথে যুদ্ধ করে নাই। এর জন্য তো আমার পিতা দায়ী নয়। তাকে কেন আপনারা নির্যাতন করেন? তারপর ক্যাপ্টেন কিছু সময় চিন্তা করে আমাকে হাজত হতে মুক্তি দেয় এবং আমার ছেলেকে হাজতে নিয়ে রেখে দেয়। আমাকে মুক্তি দেবার পর আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করি। তারপর চোখের জল ফেলতে সেখান হতে বের হয়ে আসি। তার দুই দিন পর অর্থাৎ ১৯ তারিখে রাত্রি দুইটার সময় নদীর ধারে আরো ১২ জন সহ মানিক ও রশিদকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারপর তাদেরকে একটা গর্তের মধ্যে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। স্বাক্ষর/আজহার আলী মিঞা ১১/৮/৭৩