পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | వSలి | মোঃ খালেদ নির্বাহী প্রকৌশলী ৫ই মে পাক সেনারা ভোলাতে আসে। পাক সেনারা আমাদের ওয়াপদা কলোনীতে সেনানিবাস তৈরী করে। মেজর থাকতো ওয়াপদা রেষ্ট হাউসে। মে মাসেই শান্তি কমিটি গঠন হয়। জুন মাস থেকে রাজাকারে লোক ভর্তি শুরু হয়। ৬ই মে মেজর ইয়াহিয়া অফিসারদের নিয়ে সভা করে। সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে বলে এবং এও বলে হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ এদের সব ধ্বংস করা হবে। ৭/৮ ই মে গাজীপুরের রোডে ৩/৪ জন হিন্দুকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে। এর পর পরই পাক সেনারা নিয়মিতভাবে লোক ধরে দুষ্কৃতকারী বলে হত্যা করতো। হত্যার স্থান ছিল ভোলা খেয়াঘাট, ওয়াপদা কলোনী এবং শিবপুর মেঘনায় পাড়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি আসে ভোলাতে। সকালে উঠে দেখলাম একটি আর্মি নেই কলোনীতে। কোথায় গেছে জানতে পারলাম না। বিশ্ব ব্যাংকের লোক সব খবর নেয়। খাদ্যের অবস্থা, পাক সেনারা কেমন অত্যাচার করেছে ইত্যাদী। তাঁরা আমাদের রেষ্ট হাউসে তিন দিনের মত ছিলেন আবহাওয়া খারাপ ছিল বলে। আমি এক ভদ্রলোককে অবস্থা বুঝিয়ে বলি। শিবপুর মেঘনার পাড়ে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, এখনও ২/৪টি মৃতদেহ পড়ে ছিল, তারা তার ছবি তুলে নেয়, এবং অবস্থা মোটামুটি বুঝতে পারে। আমি পাক সেনাদের হত্যা দেখে বিচলিত ছিলাম। আমার পকেটে সব সময় রিবলভার থাকতো। যে কোন অবস্থার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকতাম। পাক সেনারা বিভিন্ন স্থান থেকে লোক ধরে আনতো তারপর এখানে তাদের গুলি করে হত্যা করতো। সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে হত্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কারণ ঐ সময় থেকেই বিভিন্ন থানাতে মুক্তি বাহিনীর তৎপরতার শুরু হয়। জুন/জুলাই মাসে কাজের জন্য আমাকে বিভিন্ন থানাতে যেতে হতো। গাড়ী দেখে প্রথমে মানুষ পালাতো কিন্তু পরে আমাকে দেখে কাছে আসতো। অক্টোবর মাসে হত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। সৈন্যরা বাস থামিয়ে লোক নামিয়ে হত্যা করতো। গুজব রটলো মুক্তিবাহিনীর লোক কালো গেঞ্জি পরিধান করে। তারপর দেখা গেল খান সেনারা কালো গেঞ্জিওয়ালা লোক দেখলেই ধরতো, অত্যাচার করতো ও হত্যা করতো। যাদেরকে ধরে আনতো তাদের খেতে দিত না, পরে হাত, পা বেঁধে গরু পিটানো পিটাতো যতক্ষন জ্ঞান থাকতো। পিটিয়ে অনেককে হত্যা করতো। শেষের দিকে খান সেনারা গুলি খরচ করতো না কলোনীর একটি ঘরে জবাই করতো। স্বাধীনতার পর ঘরটি দেখলাম চাপ চাপ রক্তে ভরা। আমি দেখেছি জবাই করে টানতে টানতে একটি গর্তে মাটিচাপা দিয়ে রাখতো। এই ভাবে আমার ধারণা, ২০০০ লোককে তারা হত্যা করেছে। পাক সেনারা বহু মেয়ের উপরও পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। অনেক সময় বলতো দুষ্কৃতকারীরা ভারতীয় সিপাইয়ের পাল্লায় পড়ে এরকম কাজ করেছে এদেরকে খতম করবোই। মুক্তি বাহিনী আমাদের শত্র ওদেরকে খতম করতে হবে। পাক সেনারা প্রচুর পয়সা নিয়ে অনেক লোক ছেড়ে দিয়েছিল। বোরহানউদ্দিন এবং দৌলতখান থানা দুটিতেই পাক সেনারা অত্যাচার চালিয়েছে ব্যাপক। মুক্তি এবং মিত্র বাহিনীর চাপে ৯ই ডিসেম্বর পাক সেনারা ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। শোনা যায় চাঁদপুরের কাছে মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে মেজরসহ সবাই নিহত হয়। স্বাক্ষর/মেঃ খালেদ ১২/৯/৭৩