পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড
২৬৭

জনের দলে আমার খুড়তুতো ভাই তখনো মরেনি, ‘মা’ ‘মা’ করে কাঁদছে, আমরা শুনতে পাচ্ছি। ঐ অবস্থায় সারা রাত থেকে পরদিন আমার ভাই মারা যায়। আমাদেরকে তীরে নামিয়ে এক একজনের জন্যে ২ জন করে সেনা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আমাদের বললো জ্লে নামতে। খান সেনারা চায়না অটোমেটিক রাইফেল প্রস্তুত করতে থাকে। আমি বলি, দাদা, সময় যায় ঝাঁপ দে। দড়ি বাঁধা অবস্থায় আমরা ৫ জন নদীতে ঝাঁপ দেই। খান সেনারা গুলি চালায়। আমরা টানাটানি করে হাতের দড়ি খুলে ফেলি। আমি সাঁতার দিয়ে নদীর ওপারে চলে যাই। দাদা আর এক দিকে চলে যায়। গুলি অনবরত চলছে আর খান সেনারা গালাগালি করছে। একটি কারগো লঞ্চ দাঁড় করানো ছিলো তারা তাকে ডাকতে থাকে। আমি তীরে উঠে ক্রলিং করে ধান ক্ষেতের দিকে পালাতে থাকি। সাত মাইল দূরে টুংচর গিয়ে পৌঁছাই এক আত্মীয়ের বাড়ী। ওখানে ২দিন থাকি। জানাজানি হয়ে গেলে বালিয়া গ্রামে পালিয়ে যাই এক বন্ধুর বাড়ী। ওখানে কওছর হাওলাদারের (প্রাইমারী শিক্ষক) বাড়ীতে ২ মাস থাকি। পরে আমার আহত দাদার খোঁজ পেলাম। জানতে পারলাম আমাদের ৫ জনের মধ্যে ৩ জন বেঁচে গেছি, ২ জন মারা গেছে।

 গ্রামে গ্রামে পালিয়ে দিনের পর দিন জলের ভিতর থেকে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতে গিয়ে পৌছাই। তারা আমাদের বাড়ীঘর সব লুট করে নিয়ে যায়। আমাদের গ্রামের রাজাকারদের সহযোগিতায় তারা সমস্ত গ্রামের হিন্দু পরিবারদের ধ্বংস করে। তারপর দেশ মুক্ত হলে আমি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসি।

স্বাক্ষর/-

শ্রী বিমল কৃষ্ণ দাস

১৩/৯/৭৩