পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | ఎSE | আব্দুল করিম প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ পিরোজপুর কলেজ, পটুয়াখালী মে মাসে পাক বাহিনী পাথরঘাটা যায়। ঐ দিনই ৯ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে। সি, ও, (রেভ), পুলিশ জমাদার, এদেরকেও গুলি করে হত্যা করে। কনষ্টেবল পালাবার চেষ্টা করলে তাকেও হত্যা করে। আমি পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকি। সমস্ত পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পাক সেনাদের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, অধ্যাপক করিমকে ধরে দিতে পারলে নগদ দশ হাজার টাকা এবং একটি রিভলবার পুরস্কার দেওয়া হবে। এ সংবাদ যখন পেলাম তখন আরও ভীত হয়ে পড়ি। তারপর আমি পিরোজপুর পালিয়ে আসি। পাথরঘাটা থানাতে ১০০-এর বেশী লোককে পাক বাহিনী হত্যা করে। অত্যাচার চালায় ব্যাপকভাবে চরদুয়ানী, কালিবাড়ী, কাঁঠালতলী, পাথঘাটা ইত্যাদী এলাকা পাক বাহিনী ধ্বংস করে। প্রথমে লুট করে, পরে জুলিয়ে দেয়। বিভিন্ন সময় পাক বাহিনী অপারেশনে গিয়ে মেয়েদের উপর অত্যাচার চালায়। লক্ষণ চন্দ্র দাস নামে এক ব্যবসায়ী ৫ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে পালিয়েছিল। দালালরা সুন্দরবন এলাকা থেকে লক্ষণ দাসসহ পাঁচ ছেলেকে ধরে আনে। অকথ্য অত্যাচার চালাবার পর তাদেরকে বরগুনা মহকুমাতে পাঠায়। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ছেলে, তারপর লক্ষণ দাস, তারপর ছোট্ট দুটি ছেলেকে লাইন দিয়ে দাঁড় করায়। পরপর তিনটি ছেলেকে গুলি করে মারলে লক্ষণ দাস হার্ট ফেল করে মারা যায়। পাক সেনারা কি মনে করে ছোট দুটি ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখে। তারপর ওদেরকে মুসলমান করে পাথরঘাটাতে পাঠিয়ে দেয়। একটির বয়স ৭/৮ আর একটির ১০/১১ বৎসর হবে। অনেককেই এভাবে পাক সেনারা শেষ করেছে। কনক নামে এক ভদ্রলোককে মালেক ও তার ছেলে শাজাহানকে মুক্তি বাহিনীকে সহযোগিতা এবং স্পাইং করার জন্য পাক সেনারা বাপছেলেকে এক সাথে গুলি করে হত্যা করে। আমি পালিয়ে এসে পিরোজপুর তৃতীয় হাকিম আব্দুল মান্নান হাওলাদারের সাথে সব কথা বলি এবং বাঁচার উপায় বলতে বলি। পিরোজপুরের চার্জে তখন ক্যাপ্টেন এজাজ। মান্নান সাহেব বললেন, যদি এজাজকে আয়ত্তে আনতে পারো তাহলেই বাঁচা সম্ভব। এজাজের ছিল ক্লাবে যাওয়া অভ্যাস সেই সাথে জুয়ার ও আমি ক্লাবে গিয়ে তাস নিয়ে বসি। এই পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনের বিশ্বাস ছিল যারা তাস খেলে তারা দুষ্কৃতকারী হতে পারে না। এই বিশ্বাসের উপর হিন্দু ডাঃ ইন্দ্রভূষণ বিশ্বাস সহ আমরা অনেকে বেঁচে যাই। আমরা খেলার মারফত ক্যাপ্টেনের বেশ কাছে গিয়েছিলাম। ক্যাপ্টেন বলতো, বাংলাদেশ মুক্ত হবেই, আমরা আটকে রাখতে পারবো না।” ১৫ই নভেম্বর পাক সেনারা আমার ভাই (বি,এস,সি, ছাত্র) আব্দুল কাইয়ুমকে ধরে পাথরঘাটা থেকে এবং অকথ্য নির্যাতন চালায়। তার হাত পায়ের কোথাও অক্ষত ছিল না। শেষ পর্যন্ত এগার হাজার টাকা দিয়ে সে প্রাণ ভিক্ষা পায়। স্বাক্ষর/আব্দুল করিম >br/b/a○