পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տbr8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ৷ ২২৯ ৷ মোক্তার মোহাম্মদ পোষ্ট মাষ্টার গ্রাম- পুছড়ী থানা- বাঁশখালী জেলা- চট্টগ্রাম শনিবার ৯ই অক্টোবর ১৯৭১ ইং রাত ১০টা। মুক্তিবাহিনী সহ গ্রাম পাহারায় রত ছিলাম। নাপোড়া হইতে ঘুরিয়া সেখেরখিল হইয়া জালিয়া পাড়ায় রওনা হইতেছি তখন আনুমানিক রাত বারটা। উক্ত পাড়ায় হঠাৎ অসংখ্য গোলাগুলির শব্দ শুনিয়া দ্রুত পিছন দিকে সরিয়া নাপোড়া পুকচালিয়া পাড়ায় চলিয়া আসি এবং এই পাড়ার দক্ষিণ পার্শ্বে আসিয়া দেখিতে পাইলাম জালিয়া পাড়া দাউদাউ করিয়া জুলিতেছে। মানুষ চিৎকার ও কান্নাকাটি করিয়া প্রাণভয়ে পাহাড়ের দিকে পালাইয়া আসিতেছে। তখন সব মুক্তি বাহিনীকে বিদায় দিয়া একা আমি গ্রামে রহিয়া গেলাম এবং ব্যাপার সম্পূর্ণ জানিয়া সকালে তাহদের ক্যাম্পে জানাইব বলিয়া কথা দিলাম। দেখিতে দেখিতে আগুন আরও বাড়িয়া গেল এবং জনসাধারণকে পালাইয়া বাঁচিবার জন্য ইশারা করিলাম। ১০ তারিখ ভোর পাঁচটা হইতে না হইতে শুনিতে পাইলাম চতুর্দিকে অসংখ্য গোলাগুলির আওয়াজ। তখন আমি নিজে কিভাবে প্রাণ বাঁচাইব চিন্তা করিয়া দ্রুত আমার বাড়ীর পাশে পাহাড়ের জঙ্গলে আত্মগোপন করিয়া পরিস্থিতি লক্ষ্য করিতে লাগিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল যে নাপোড়া সেখেরখিল আগুন আগুনময়। আরও দেখিলাম পাক হানাদারেরা চতুর্দিকে লোক খোঁজাখুজি করিতেছে এবং কতকগুলি লোককে বন্দী করিয়া আমার বাড়ীর দক্ষিণ পাশ্বের রাস্তা দিয়া লইয়া যাইতেছে ও প্রতিটি বাড়ী তলাশী করিতেছে। পলায়নমান লোক দেখিয়া তাহাদিগকে গুলি করিতেছে। তখন আমি নিজেকে নিরাপদ মনে না করিয়া আরও গভীর জঙ্গলে ঢুকিয়া পড়িলাম। গোলাগুলির শব্দ বন্ধ হওয়ার পর আনুমানিক দুপুর বারটায় ধীরে ধীরে বাড়ীর দিকে চলিয়া আসিলাম। বাড়ী আসিয়া জানিতে পারিলাম পাক হানাদারেরা চলিয়া গিয়াছে এবং ১৩ই অক্টোবর বুধবার পাশ্ববর্তী মিরাপাড়া গ্রামের একজন দালাল আমার গোয়েন্দাগিরি জানিতে পারিয়া হানাদার ক্যাম্পে (চাম্বল) নালিশ করিয়া দেয়। ফলে ১৪ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার আনুমানিক বেলা এবং নাপোড়া বাজারে নিয়া আসে। সেখানে আমি দেখিতে পাইলাম আরও চারজন সেখেরখিল নিবাসী (১) একরাম মিঞা (২) হাজী শফর মুল্লক (৩) দানু মিয়া, পিতা- নজর আলী (৪) আহমদ হোসেন, পিতা-দানু মিঞা ও আমি সহ পাঁচজনকে একই রশিতে বাঁধিয়া তিন মাইল রাস্তা হাঁটাইয়া লয় এবং পথে পথে মারধোর করিতে থাকে। আনুমানিক বেলা এগারটায় তাহাদের ক্যাম্পে গিয়া পৌছার সাথে সাথে সকলের চোখ কাপড় দিয়া বাঁধিয়া ফেলে এবং একেকজন করিয়া রশি হইতে খুলিয়া নিয়া ৩/৪জন হানাদার মিলিয়া একেকজনকে বেদম প্রহার করিতে থাকে সাথে সাথে উর্দু ভাষায় কি জিজ্ঞাসা করিতেছে বা বলিতেছে তাহা কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। আমি শুধু চীৎকার করিয়া আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করিতেছি “হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা কর। বাবা মারিও না আমি আর সহ্য করিতে পারতেছি না।” এই কথা বলার সাথে সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পা উপর দিকে ও মাথা নীচের দিকে করিয়া ক্যাম্পের ছাদের সাথে লটকাইয়া ফেলে। ইহাতে কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি জ্ঞান হারাইয়া ফেলি ফলে ইহার পর আর কি ঘটিয়াছে তাহা আমি জানি না। যখন জ্ঞান তখন আমি পানির পিপসায় ও ক্ষুধায় খুব কাতর হইয়া পড়িয়াছি। নড়াচড়া করিতে পারিতেছি না। সমস্ত শরীরে ব্যথ্যা ও ফুলিয়া গিয়াছে। তখন