পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տbr(չ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পানি, পানি বলিয়া চিৎকার করিয়া খাওয়ার পানি চাহিলাম। এমন সময় একজন হানাদার আসিয়া আমার চোখের বন্ধন খুলিয়া দিয়া একটি বদনায় করিয়া পানিখাওয়াইয়া দেয় ও মাথা ধরিয়া সূর্য্যের দিকে চোখ করিয়া তাকাইয়া থাকার নির্দেশ দেয়। এইভাবে কয়েক মিনিট থাকার পর যন্ত্রণায় মাথা নাড়িয়া মুখ ফিরিইলে তখন আরেক দফা মারধোর চলিল। সূর্য্যের দিকে তাকাইয়া থাকার অপারগতায় চোখে মরিচের গুড়া ছিটাইয়া দেয়। ইহাতে অসহ্য যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া গড়াগড়ি করিতে থাকি। অনুরোধ করিতে থাকি যে আমাকে এইরূপ কষ্ট না দিয়া একেবারে গুলি করিয়া মারিয়া ফেল নতুবা বাঁধন খুলিয়া দাও আমি ছাদের উপর হইতে লাফাইয়া পড়িয়া আত্মহত্যা করি। কিন্তু পাক বাহিনীর দালাল হানাদারদিগকে বলিয়া দেয় যে আমি ও আমার ভাই নাকি মুক্তিবাহিনী এবং আমাদের নিকট ছয়টা রাইফেল আছে এবং আমাকে গুলি করিয়া মারার জন্য অনুরোধ করিতে লাগিল। আমরা নাকি বাঁচিয়া থাকিলে তাহার জীবনের আশঙ্কা আছে। এই বলিয়া সে চলিয়া যায়। ইহার পর আরেক দফা আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চলিল। আমি মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়িয়া থাকিয়া মৃত্যুক্ষণ গুনিতে লাগিলাম। খোদার কৃপায় এমন সময় স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হানদারদের সবেদারসহ তথায় আসিয়া আমাকে সনাক্ত করিয়া নিয়া জামিন দিল এবং সাথে শর্ত দিল যে মুক্তিবাহিনীর একটি নাম তালিকা ও আমার ভাই আওরঙ্গজেবকে চারদিনের মধ্যে হাজির করিয়া দিতে হইবে নতুবা বংশের একজনও জীবিত রাখিবে না। আমি তখন বাধ্য হইয়া তাহদের নাগপাশ হইতে মুক্তি লাভের আশায় ইহা স্বীকার করিয়া মুক্ত লাভ করি। তারপর উক্ত ক্যাম্প হইতে একখানা রিক্সায় করিয়া বাড়িতে চলিয়া আসি। শরীর ও চোখের চিকিৎসায় চারদিন কাটাইয়া একটু আরোগ্য লাভ করিয়া বাড়ী হইতে পলাইয়া গিয়া নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় লইলাম। ইহারও দুই একদিন পর হানাদাররা চাম্বল হইতে ক্যাম্প উঠাইয়া উত্তর বাঁশখালী গুনাগরী ক্যাম্পে চলিয়া যায় এবং রাজাকার বাহিনী মোতায়ন করিয়া আমাদের গ্রামে ক্যাম্প করিয়া দেয়। স্বাক্ষর/মোক্তার মোহাম্মদ