পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

HIV বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լ Ջ8Ե լ আব্দুল মোমেন প্রধান শিক্ষক দক্ষিণ বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয় ছাগলনাইয়াঃ, নোয়াখালী ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে পাক বাহিনী অত্র এলাকায় প্রবেশ করে এবং বল্লভপুর হাইস্কুলে শিবির স্থাপন করে। দক্ষিণ বল্লভপুরের রশিদ উল্লাহ সাহেব বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন। নভেম্বর মাসের ১লা তারিখে তাহার নিজ বাড়ী হইতে বন্দি করিয়া বল্লভপুর হাইস্কুলে তাহাদের শিবিরে লইয়া যায়। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ রশিদুল্লাহ সাহেবকে ৫দিন অকথ্যভাবে দৈহিক নির্যাতন চালানোর পর ১৬ই নভেম্বর তারিখে বল্লভপুর হাইস্কুলের নিকটে জীবন্ত অবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করে। পাক বাহিনী বল্লভপুর গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ীই তল্লাশী চালায় এবং প্রতিটি বাড়ী হইতেই টাকা, পয়সা, সোনার গহনা ও সঙ্গে বহন করিয়া লইয়া যাইবার মত বস্তু লুন্ঠন করিয়া লইয়া গিয়াছে। ইহার মধ্যে আওয়ামী লীগ কর্মীদের এবং হিন্দুদের বাড়ী ঘরেরই বেশী ক্ষতি সাধন করিয়াছে। ইহা ছাড়াও পাক বাহিনী উক্ত স্কুলের শহীদ মিনারটি ধ্বংস করিয়া ফেলিয়াছে এবং যাবতীয় আসবাবপত্র, লাইব্রেরীর বই-পুস্তুক, ছাত্রদের খেলার সরঞ্জামাদি ও বিজ্ঞান গবেষণার যন্ত্রপাতি আগুন দ্বারা জুলাইয়া দেয় এবং লুন্ঠন করিয়া লইয়া যায়। পাক বাহিনী অযথা নিরীহ লোকদের সন্দেহের বশে বন্দী করিয়া তাহাদের শিবিরে লইয়া যায় এবং অকথ্য ভাবে দৈহিক নির্যাতন চালায়। ১৮ই সেপ্টেম্বর তারিখে আমি নিজ বাড়ীতে অবস্থান কালে হঠাৎ দেখিতে পাইলাম ৫জন পাকসেনা তাহাদের শিবির হইতে গ্রামের দিকে আসিতেছে। তখন আমি আত্ম রক্ষার্থে বাড়ীর পাশেই আত্মগোপন করি। এমন সময় আমি স্বচক্ষে দেখিতে পাইলাম যে উক্ত ৫জন পাকসেনা আমাদের গ্রাম হইতে ৩জন যুবতী মেয়েকে বন্দী করিয়া তাহদের শিবিরের দিকে লইয়া যাইতেছে। মেয়ে তিনটি পাক সেনাদের মরণ ছোবল হইতে ছাড়া পাইবার জন্য ভীষণ চিৎকার করিতেছে। নরপশুরা তথাপিও জোরপূর্বক তাহাদের শিবিরে লইয়া যায় এবং প্রায় তিনদিন পাশবিক অত্যাচার চালানোর পর ছাড়িয়া দেয়। বল্লভপুরের হাইস্কুলটির চর্তুপার্শ্বে প্রায় ২৫টি বদ্ধ পরিখা রহিয়াছে। বদ্ধ পরিখাগুলিতে এখানকার স্থানীয় এবং অন্যান্য এলাকা হইতে প্রায় ১৫০ জন লোককে পাক সেনারা মাটি চাপা দিয়া রাখিয়াছিল। স্বাক্ষর/আব্দুল মোমেন