পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড
৩০৮

কাফের নজীর আহমদের সাথে ডাক্তারের যোগাযোগ আছে। সেই সময় একজন মুক্তিবাহিনী হইতে সারেণ্ডার করা যুবক রাজাকার সাক্ষী দেয়। এই পত্র আমার মারফতে নজীর আহমদ দিয়াছে। আমি সম্পূর্নভাবে এই চিঠি সম্বন্ধে অস্বীকার করি। তখন ক্যাপ্টেন পারভেজ আসিয়া কানে গালে চড় দেয় এবং লেঃ সেলিম ও ইসহাক পারভেজ হাত ও বুট দিয়া বেদম প্রহার করিয়া আমাকে বাহিরে ফেলিয়া দেয়। তখন আমার জ্ঞান ছিল না, প্রায় এক ঘণ্টা পরে জ্ঞানহীন অবস্থায় সামরিক জেলখানায় পাঠান হয়। সাথে সাথে আরম্ভ হয় দৈহিক নিয়াতন। প্রতিদিন সকাল বিকালে বেদম প্রহার করা হইত এবং বলিত ভারতের সহিত ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহিত যোগাযোগ আছে কি না। এইভাবে ৪দিন চলিয়া গেল, বাসায় কোন সংবাদ দিতে পারিলাম না যে আমি এখনও বাঁচিয়া আছি। পরে একজন সিপাহীর মারফতে খবর দিলাম আমরা ভায়রা ভাই-এর নিকট। আমাদের প্রায় ৮০ জনকে ছোট একটি কক্ষে আলোহীনাবস্থায় রাখিত। দিবারাত্রে নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত প্রস্রাব, পায়খানাও করা যাইত না। আমার ডাইবেটিস রোগ, আমার কিছুক্ষন পরপর প্রস্রাব করিতে হয়, কিন্তু প্রসাবের কথা বলিলেও তাহারা দরজা খুলিত না, মাঝে মাঝে প্রস্রাবের চাপে জ্ঞানহীন হইয়া পড়িতাম। আমার সংবাদ পাইয়া আমার স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও রাঙ্গুনিয়ার জন সাধারণ আমার মুক্তির জন্য বিশেষ চেষ্টা করে। পরে তিন হাজার টাকা পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশকে দিয়া ঈদের আগের দিন রাত্রে নরপশুদের কবল হইতে মুক্তি পাই। কিন্তু তাহাদের নির্যাতনে আমার হাতের আঙ্গুল ভাঙ্গিয়া যায়, কানের পর্দা ফাটিয়া যায়।

স্বাক্ষর/-

ডাঃ মোঃ ইদ্রিস মিঞা