পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ৷ ২৬২ ৷৷ মোঃ বাদশাহ মিয়া ম্যানেজার শ্রীমঙ্গল সোনালী ব্যাঙ্ক শ্রীমঙ্গল, সিলেটঃ আমি আমার ছেলে-মেয়েদেরকে ঢাকা পাঠানোর জন্য ঢাকা যাওয়ার রাস্তা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য ১৩ই এপ্রিল হোণ্ডা নিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেজারী অফিসে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পাক বাহিনী বিমান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপর ব্যাপকহারে শেলিং আরম্ভ করে। এই সময় ২জন লোক মারা যায় এবং ৫-৬ জন আহত হয়। ব্রাক্ষবাড়িয়া থেকে রওনা হয়ে বিকালে তালশহর রেল ষ্টেশনে যখন পৌছাই তখন দেখতে পাই দক্ষিণে লালপুর বাজারে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পাক বাহিনী বিমান আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রায় ১ ঘন্টা এই আক্রমণ চলে, বিমান থেকে ব্যাপকভাবে শেলিং ও বোমা ফেলা হয়। খবর পাই এতে মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। রাত্রিতে আমি আশুগঞ্জ সোনালী ব্যাঙ্কে অবস্থান করি। ১৪ই এপ্রিল ৬টার সময় থেকে আশুগঞ্জের উপর আক্রমণ চলে। পাক বাহিনী হেলিকপ্টার করে আশুগঞ্জ ওয়াপদার পার্শ্বে অবতরণ করতে। পাক বাহিনীর এই অবস্থান সোনালী ব্যাঙ্কের উপর থেকে নোয়াখালীর একজন টেলিফোন অপারেটর দেখতে পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ভৈরব ব্রীজের পূর্ব তীরে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে টেলিফোনযোগে খবর দেয়। সে নিজে দোতালার উপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে এবং আমাদেরকে বলে যে, যদি বাঁচতে চান তবে পালান। আশুগঞ্জ অবতরণ করার পরেই তারা সারা শহর চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং বৃষ্টির মত গোলাবর্ষণ করতে থাকে । এই সময় সেখানে যে লোককে তারা পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে। আমার মনে হয় যদি পাক বাহিনীর অবস্থানের খবর টেলিফোন অপারেটর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে না জানাত তবে একটিও মুক্তিযোদ্ধা সে দিন পাক বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পেত না। পাক বাহিনী পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলিতে অগ্নিসংযোগ করে। আমরা আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাই এবং কয়েকজন আমাদের ব্যাঙ্কের সম্মুখের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে, তখন আমি পেছন দরজা দিয়ে রেবিয়ে একটা চিপাগলি দিয়ে নদীর পারে চলে আসি। নদীর পারে এসে আরও কয়েকজন নরনারীকে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই। নদীর মাঝখানে একটা নৌকা বাঁধা ছিল। আমি সাঁতার কেটে নৌকাটাকে নদীর পারে নিয়ে আসি এবং অসহায় লোকগুলিকে নৌকায় তুলে নিয়ে উত্তর দিকে পালিয়ে যাই। আমি যখন নদীর পারের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আমি রাস্তার উপর ১৫-১৬ জন লোককে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই এবং অনেককে গুলি লেগে আহত অবস্থায় কাতরাতে দেখি। চারিদিক থেকে শুধু গুলি আর নারী-পুরুষদের করুণ চিৎকার ভেসে আসে। অতঃপর আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে আসি। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছেই দেখতে পাই যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প তুলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তর দিকে তেলিয়াপাড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। স্বাক্ষর/মোঃ বাদশাহ মিয়া ১৭.১০.৭৩ইং