পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©©☾ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ জগন্নাথ হলে পাক-বাহিনীর গণহত্যার ওপর দৈনিক পূর্বদেশ ফেব্রুয়ারী,১৯৭ কয়েকটি প্রতিবেদন SR হানাদারদের কবলে জগন্নাথ হল-১ পচিশের সেই ভয়ংকর রাতে তিনি একটানা ১৯ ঘন্টা ম্যানহোলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ হল। সার্ভেন্টস কোয়ার্টার। পাশেই গোয়াল। এর নিকটে ম্যানহোলে একটানা ১৯ ঘন্টা আত্মগোপন করে থেকে তিনি আত্ম রক্ষা করেছেন। নিজেকে রক্ষা করেছেন হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলা থেকে। ম্যানহোল পুর্তি দুৰ্গন্ধময়। মাঝে মাঝে তার দম বন্ধ হয়ে যেত। মাথা ঝিম ঝিম পারি রি করত। উপায় নেই বেরুবার। অবিরাম গোলাগুলির শব্দ। মানুষের আর্তনাদ, কান্নার শব্দ, সবই তার কানে ভেসে আসছিল। একটু পর পর কিছু সময় অন্তর অন্তর ম্যানহোল থেকে কোন রকমে গলাটুকু পর্যন্ত বের করে তিনি শ্বাস- প্রশ্বাস নিয়েছেন। এক পলক দেখে নিতে চেষ্টা করেছেন ম্যানহোলের বাহিরের দুনিয়াটাকে, যখন তখন বীভৎস হত্যালীলা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রী পরিমল গুহ আমার কাছে ২৫শে মার্চের ভয়াল ভয়ঙ্কর রাত্রের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। তিনি এই দুঃস্বপ্নের রাতের একজন সাক্ষী হয়ে ছিলেন। ম্যানহোলে কোন রকমে ঢুকে পড়ে মৃত্যুপুরীর নিশ্চিত পরিমাণ থেকে নিজেকে অনেকটা অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছেন। তিনি বলেছেন ২৫শে মার্চ রাতে প্রায় ১১টার দিকে আমি প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রথীন রায়ের লক্ষীবাজারস্থ বাসা থেকে হলে ফিরি। তখনো হানাদার সামরিক বাহিনীর লোকেরা হামলা শুরু করেনি। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিকেড তৈরী করেছেন। গাড়িগুলো ক্ষীপ্ৰ গতিতে চলাচল করছে। রথীন দার বাসা থেকে রাস্তায় পা বাড়াতেই লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কোথায় যাবেন। আমি জগন্নাথ হলে যাব শুনে সবাই আমাকে যেতে নিষেধ করলেন। বললেন, শহরের অবস্থা খুব উত্তপ্ত, যে কোন সময় সামরিক বাহিনী নামতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাই হবে এদের প্রধান লক্ষ্যস্থল। আপনি যাবেন না। শ্রী পরিমল গুহ বলেছেন, লোকজনের কথা শুনে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। ভাবলাম রাত্রে হলে ফিরব না, হলে তখন অনেক ছাত্র। হলে অবস্থানরত ৬০/৭০ জন ছাত্রের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। তাদের কথা ভেবে আমি হলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মরলে সবাই একসাথে মরবো আর বাঁচলে সবাই একসাথে বাঁচবো। ওদেরকে ও ভাবে ফেলে আমি নিজের প্রাণ রক্ষাকে বিরোধী ভেবে হলে ফিরি। রাত্র তখন পুরো ১১টা। চারিদিকে থম থমে ভাব। গাড়ি ঘোড়া চলাচল বন্ধ। নিরব নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে দূর থেকে গগনবিদারী শ্লোগান “জয় বাংলা, বাংগালী জেগেছে- বাংগালী জেগেছে।” হলের ছাত্ররা হলের গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই ভীতসন্ত্রন্ত! কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই অজানা আশংকায় শঙ্কাগ্রস্ত। আমি তাদেরকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললাম। আমার কথায় কেউ বিশ্বাস করলো না। কেই বললেন আমাদের উপর হামলা করার কোন কারণ নেই। এর প্রায় ২৫ জন ছাত্র বাহিরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেবার জন্য তৎক্ষণাৎ হল ত্যাগ করলেন। জানি না তারা এখন কোথায়? সত্যিই কি নিরাপদ হতে পেরেছিলেন,