পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w:yw5ყ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড না হানাদারদের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। আমাদের হলে পাক বাহিনী আক্রমণ করে রাত সাড়ে বারটায়। এর আগেই আমরা চারদিকে গোলাগুলির আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সেদিন আমরা রাইফেলের গুলির শব্দ শুনিনি। শুনেছিলাম মেশিনগান, মর্টার শেলিং ও মাঝে মধ্যে ট্যাঙ্কের প্রচণ্ড শব্দ। আমাদের সৈন্য প্রবেশের আগে আমরা যারা হলে ছিলাম তাদের মধ্যে কেউ কেউ হলের করল। আমি পিছনের দিকের ড্রেনের মধ্য দিয়ে সার্ভেন্টস কোয়ার্টারের দিকে গেলাম। হানাদার সৈন্যরা তখন হলে ঢুকে পড়েছে। আমি দেখলাম তারা প্রতিটি রুম তন্ন তন্ন করে খুজছে। আমার কানে গুলির শব্দ পোঁছাচ্ছিল। আমি পিছনের দিক দিয়ে বেরুলাম। ধীরে ধীরে সার্ভেন্টস কোয়ার্টারের ড্রেনের দিকে এগিয়ে গেলাম। হানাদার সৈন্যরা হলে ঢুকে পড়েছে। আমি তখনো ম্যানহোলে ঢুকে পড়িনি। দেখলাম সৈন্যরা তন্ন তন্ন করে প্রতিটি রুম খুঁজছে। হলে বাতি নেই। হল আক্রমণের আগেই বিদ্যুৎ যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিল ওরা। তবুও আসত। এর মাঝেই কাছ থেকে গুলির শব্দ কানে আসলো। গুলির শব্দে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। এর পরে আমি ম্যানহোলে ঢুকি। তখন রাত প্রায় ১টা। ২৬শে মার্চ সকালে ভোরের সূর্য উঠলো। আমি ম্যানহোলে। সারাদিন ম্যানহোলে থাকলাম। সারাদিন আমার কানে শুধু গোলাগুলি আর মানুষের আত্মকান্না ভেসে আসছে বা এসেছে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। আর পারা যায় না। ১৯ ঘন্টা পর আমি প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তায় গুনে গুনে পা বাড়াই। দেওয়াল টপকিয়ে নিকটবৰ্ত্তী ষ্টাফ কোয়ার্টারে যাই। প্রফেসর সন্তোষ ভট্টাচার্যের বাসায় আশ্রয় নেই। -দৈনিক পূর্বদেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ হানাদারদের কবলে জগন্নাথ হল-২ হোসেন তওফিক জগন্নাথ হলে পাকিস্তান হানাদার সৈন্যদের অতর্কিত আক্রমণ শুরু হয়ে ২৫শে মার্চ রাত্র সাড়ে বারটায়। ছাত্ররা দিশেহারা হয়ে যে যেদিকে পারলেন আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টা করলেন। ক’জন দল বেঁধে ছাদে উঠলেন, কেউ কেউ নিজের কক্ষেই আত্মগোপন করার চেষ্টা করলেন, দু’একজন সার্ভেন্টস কোয়ার্টারের দিকে গেলেন। জগন্নাথ হল। নর্থ হাউজ। ২৯ নং কক্ষ। কক্ষে দুজন ছাত্র থাকতেন। হরিধর ও সুনীল দাস। ২৫শে মার্চ সুনীলের একজন অতিথি এসেছিলেন। পরিমল বললো পাকিস্তানী হিংস্র হানাদারেরা নর্থ হাউজে আক্রমণ চালিয়ে প্রথমই ঢুকলো ২৯ নং কক্ষে। তিনজনই তখন রুমে উপস্থিত। পাকিস্তানী সৈন্যরা এত হিংস্র হতে পারে তারা তা ধারণা করেননি। পেয়ে গেলো। শিকার ধরতে পেরে এই পশু সৈন্যদের সে কি উল্লাস সে কি আনন্দ পরিমল গুহ বললেন, হলে বিদ্যুৎ সরবারাহ বন্ধ। সৈন্যরা সার্চ লাইট সাথে এনেছিলো। তিনজনকে একত্রে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ করল তারা। একত্রে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। এরপর সৈন্যরা রুমে একটা গ্রেনেড ছুড়ে মারলো।