পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՖԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাছে যদি কেউ বেঁচে যায়। ব্রাশে সুনীল ও তার অতিথি মারা গেলেন। সুনীলের খবর নিতে এসে তিনি নিজেই নরপশুদের থাবায় প্রাণ বিসর্জন দিলেন। হরিধরের গায়ে গুলি লাগেনি। মেশিনগানের গুলির শব্দে তিনিও অপর দুজনের সাথে পড়ে গিয়েছিলেন মেঝেতে কিন্তু গ্রেনেড লাগলো তার পায়ে। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হলেন। পরিমল গুহ বলললেন, গেনেড ছুড়েই হানাদার সৈন্যরা কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তারা ভেবেছিল সবাই শেষ। কেউ মেশিনগানের গুলি এবং এর পরেই গেনেড চার্জে বাঁচতে পারেনা। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন হরিধর। তার পা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছিল। নিজের তাজা টকটকে লাল রক্তের ধারা নিজেই চেপে ধরে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রক্ত বন্ধ করতে পারেন নি। হরিধর বসে কক্ষ পাহারা দিচ্ছিলেন তার বন্ধু সুনীল আর তার অতিথির মৃতদেহ কক্ষে রক্তের স্রোত বেরোবার উপায় নাই। হিংস্র হায়েনার দল এ কক্ষে সে কক্ষে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাদেরকে পেয়েছে তাদেরকেই হত্যা করেছে। হারিধর বিস্ময়ে বিমূঢ়। তার চেতনা শক্তি লোপ পাবার উপক্রম। হতবাক হয়ে বসে রয়েছেন। চিন্তা করছেন হরিধর, সুনীল ও তার অতিথি এবং অপরাপর ছাত্রদের শোচনীয় পরিণতির কথা। তিনি চিন্তা করছেন। খেই হারিয়ে যাচ্ছেন তবুও চিন্তা করছেন। হঠাৎ মনে পড়লো তার কক্ষের কয়টি শিক ভাঙ্গা। চেষ্টা করলে হয়তো বেরোনো যাবে মৃত্যুপুর থেকে এপথে। তখন শেষ রাত। হলের ভিতরে গোলা গুলির আওয়াজ কমে গেছে। হরিধর চেষ্টা করলেন। পাইপ বেয়ে নিচে নামলেন। কিন্তু নিরাপদ স্থান কোথায়। ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দিয়ে এগুলেন তিনি পুকুরের দিকে। তখনো তার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তবে রক্তের বেগ কমে গেছে। প্রায় পানির সাথে মিশে তিনি পুকুরের পারে ঘাসের মধ্যে আশ্রয় নিলেন। এরপর এখানে থেকে তিনি আর সরেননি। মার্চ সকাল পর্যন্ত হরিধর এ অবস্থায় কাটিয়েছিলেন। সকালে কারফিউ তুলে নেওয়া হলো। জনৈক দোকানী এ পথে যাবার সময় অর্ধমৃত হরিধরকে দেখতে পায়। তিনি হরিধরকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসাপাতালে নিয়ে গেলেন। বেশ কয়েকদিনের চিকিৎসার পর হরিধর সুস্থ হয়ে ওঠেন। -দৈনিক পূর্বদেশ ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ হানাদারদের কবলে জগন্নাথ হল-৩ ২৫জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র একজন ছাড়া কেউ এদের ক্রুদ্ধ ছোবল থেকে রক্ষা পাননি তাদের বুকের সাইজ মিলিয়ে দাঁড় করানো হল। কয়েকটা লাইন। প্রতি লাইনে তিনজন। তারপর “দ্রিম দ্রিম’ শব্দ। মেশিনগানের গুলি। সবাই একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। তারপর একটু নাড়াচড়া করে মহান মৃত্যুর হীম শীতল স্পর্শে নীরব হয়ে গেলেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদের কথা বলছি। হানাদার পাকিস্তানী হায়েনার দল ২৫ মে মার্চে শেষ রাতে হলের ছাদে আশ্রয় গ্রহণকারী বেশ কয়েকজন ছাত্রকে এমনিভাবে গুলি করে হত্যা করে। শ্ৰী পরিমল গুহ বলেনঃ পাকিস্তানী নর পশুদের তাণ্ডব নৃত্য দেখে সত্য দাস, রবীন ও সুরেস দাসসহ প্রায় জনা পচিশেক ছাত্র হলের ছাদে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন আত্মরক্ষার জন্য। একমাত্র সুরেস ছাড়া আর কেউ ওদের ক্রুদ্ধ ছোবল থেকে রক্ষা পাননি। তিনি বলেছেন সুরেস একটু বেঁটে খাটো। বুকের সাইজ অন্যান্যদের সাথে তার মিল ছিলোনা। তাকে সবার পিছনে দাঁড় করানো হলো। তারপর গর্জে উঠলো মেশিন গান। সকলের বুক হানাদারদের মেশিনগানের গুলিতে ঝাঝড়া হয়ে গেল। হলের ছাদ লাল টুকটুকে রক্তের স্রোত বইলো। সুরেস