পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՖԵ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড বেঁটে খাটো, তার বুকে গুলি লাগেনি। লেগেছিল তার কাঁধে। তিনিও সকলের সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ঠিক মৃতের মতো। মৃতের মিছিলে জীবন্ত মৃতের মিছিলে জীবন্ত সুরেস। আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নিতে গিয়েও সবাই মৃত্যুর কোলে আত্মসমর্পণ করলন; মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে পারলেন না। কিন্তু শুধু বেঁচে রয়েছেন তিনি। বেঁচে রয়েছেন তিনি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জীবন্ত সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদশী হিসাবে পরিমল বললেন, সুরেসের কাঁধের মাংস উড়ে গেছে মেশিনগানের শক্তিশালী গুলিতে অবিরাম ধারায় ঝরছিল ক্ষত স্থানে গায়ের জোরে চেপে ধরেও তিনি রক্ত বন্ধ করতে পারছিলেন না। নিজের শরীরের উষ্ণ রক্তে তিনি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। নিজের গায়ের টকটকে তাজা রক্ত অবিরাম ধারায় ঝরছে তো ঝরছেই। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না তার রক্তপাত, রক্তের বেগ কমছে না। ব্যাণ্ডেজ করা দরকার কিন্তু ব্যাণ্ডেজ করবেন কি দিয়ে। পরনের লুংগি আর তৈরী করলেন ব্যাণ্ডেজ। ছাদের উপর সারিবদ্ধ তরুণদের মৃতদেহ প্রহরীর মত তিনি জেগে আছেন একা। রক্তের স্রোত। হলের ছাদ লাল রক্তে ভেসে গেছে। চারিদিক নীরব নিঝুম। শুধু গোলাগুলির শব্দ ও মানুষের আর্তকান্না ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। পরিমল বলেই চলেছেনঃ মৃত্যুর পাশে বসে থাকার উপর তার ধিককার আসছিলো, আবার কখনো তার চোখের সামনে ভেসে উঠত ভীড় জমানো ফেলে আসা স্বপ্ন রঙ্গিন মধুময় হাজারো দিনের স্মৃতি। আছড়ে আছড়ে কেঁদে সেসব স্মৃতি ফরিয়াদ জানাত। স্মৃতির মিছিলে সুরেস হারিয়ে ফেলতেন। হলের ছাদের উপর পানির ট্যাঙ্ক। হঠাৎ তার চেতনার উদয় হল। সুরেস আর দেরী না করে পানির ট্যাঙ্কে ঢুকলেন। ২৬শে মার্চ পুরোদিন ও সারারাত তিনি পানির ট্যাঙ্কেই কাটালেন আত্মগোপন করে। ২৭ তারিখ পানির ট্যাঙ্কে তার থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ২৭ তারিখে ভোরের দিকে হাতে প্রাণ নিয়ে তিনি ভয়ে ভয়ে নামলেন ছাদ থেকে। এগিয়ে গেলেন জগন্নাথ হলের উত্তর পার্শ্বের রাস্তার দিকে। সুরেস ভয়ে সোজা হননি। হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছিলেন। পরিমল গুহ তখন কারফিউ তুলে নেবার পর ষ্টাফ কোয়টার থেকে এদিকের রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। সুরেসকে পরিমলের দেখা হওয়ায় সুরেস প্রাণ ফিরে পেলেন। পরিমল গুহ পরে সুরেসকে নিয়ে কাহিনী সুরেসের কাছ থেকে শুনেছেন। -দৈনিক পূর্বদেশ, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ হানাদারদের কবলে জগন্নাথ হল- ৪ অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল নরপশুরা। অমানুষিক প্রহারের ফলে তারা তিনজন যখন প্রায় আধমরা তখন তাদের লাইন বেঁধে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হলো ২৬শে মার্চ সকাল ১১টা হানাদার সৈন্যরা ৫ জনকে ধরে নিয়ে এলো হলের ভিতরে। তাদের দিয়ে বিভিন্ন কক্ষ, হলের ছাদ, বারান্দা থেকে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত লাশগুলো নিয়ে ট্রাকে তুললো। হলের মাঠে মাঝখানে আগে