পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন H8ෆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড

আপনি কি ২৫শে মার্চের হত্যাকাণ্ডের ছবি নিজ হাতে তুলেছিলেন?
হ্যাঁ আমি জগন্নাথ হলের মাঠে ২৬শে মার্চের সকাল বেলা যে মর্মস্পশী দৃশ্য ঘটেছিল তার ছবি

আমার বাসার জানালা থেকে টেলিস্কোপ ক্যামেরায় তুলেছিলাম। এ ছবি তোলার জন্য কি আপনার কোন পূর্বপরিকল্পনা ছিল, না এমনি হঠাৎ করে মনে হওয়াতে তুলে নিয়েছেন?

৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সোহরাওয়াদী উদ্যানের ভাষণের পর থেকেই আমার একটা ধারণা হয়েছিল যে এবার একটা বিরাট কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তাই তখন থেকেই বিভিন্ন সভা, শোভা যাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, ব্যারিকেড ইত্যাদির ছবি আমি তুলতে আরম্ভ করি।

ক্যামেরাটি কি আপনার নিজস্ব?

না, ওটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ভিডি,ও, টেপ ক্যামেরা। ছাত্রদের হাতে-কলমে

শিক্ষা দেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনি ধরনের আরো বহু ক্যামেরা ও জটিল যন্ত্রপাতি রয়েছে

ক্যামেরাটি আপনার কাছে রেখেছিলেন কেন?
এর জবাব দিতে গেলে আমাকে আরো পেছনের ইতিহাস বলতে হয়। ইতিহাস কথাটা বলছি এ জন্য যে এগুলো ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখা উচিত। ৭ই মার্চের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কিছু ছেলে এসে আমাকে ধরল, “স্যার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি দিয়ে একটি অয়্যারলেস ষ্টেশন তৈরী করতে হবে আমি ওদের কথা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারলাম না। এর পরে ওরা একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথা ঠিক করে আমাকে তার ধানমণ্ডির বাড়িতে নিয়ে গেলেন। আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর একেবারে ভিতরের এক প্রকোষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি প্রথমে ব্যাপারটার গুরুত্ব অতটা উপলদ্ধি করতে পারিনি। অনেক ভিতরের একটা কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি দেখলাম সেখানে সোফার উপর তিনজন বসে রয়েছেন। মাঝখানে বঙ্গবন্ধু। তার ডানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব ও বাঁ পাশে তাজউদ্দিন সাহেব।

দিল। যদিও অনেকবার তাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি সোফা থেকে উঠে এসে আমাকে ঘরের এক কোণে নিয়ে গেলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে অত্যন্ত সন্তৰ্পণে বললেন, “নুরুল উল্লা আমাকে ট্রান্সমিটার তৈরী করে দিতে হবে। আমি যাবার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। তুমি আমায় কথা দাও, যেভাবেই হোক একটা ট্রান্সমিটার আমার জন্য তৈরী রাখবে। আমি শেষবারের ভাষণ দিয়ে যাব।” বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ তখন আমার কাছে বাচ্চা শিশুর আবদারের আবেগময় কণ্ঠের মত মনে হচ্ছিল। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমাদের তড়িৎ কৌশল বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে খুলে বললাম। শুরু হল আমাদের কাজ। বিভাগীয় প্রধান ডঃ জহুরুল হকসহ প্রায় সকল শিক্ষকরাই আমাকে সহযোগিতা করতে লাগলেন ৯ দিন কাজ করার পর শেষ হল আমাদের ট্রান্সমিটার। এর ক্ষমতা বা শক্তি ছিল প্রায় সারা বাংলাদেশব্যাপী। শর্ট ওয়েভে এর শব্দ ধরা যেত। যাহোক পরবর্তী সময়ে এর ব্যবহার আসেনি। এই সাথেই আমার মাথায় ধারণা এল, যদি কোন হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ বা গোলাগুলি হয় তা হলে তা আমি ক্যামেরায় তুলে ফেলব। এবং সে থেকেই ক্যামেরাটি আমার সাথে রাখতাম।