পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

i. "ඵ8S বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড আপনি কখন ছবি তোলা শুরু করেন? রাত্রে ঘুমের মাঝে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে আমাদের সকলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবশ্য আমরা তখন অতটা গুরুত্ব দেইনি। আমি ভেবেছিলাম যে আগের মতই হয়ত ছাত্রদেরকে ভয় দেখাবার জন্য ফাঁকা গুলী করা হচ্ছে। অথবা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের নির্দেশ ও সহযোগিতায় যে সমস্ত হাত বোমা তৈরী করছিল তারই দু’একটা হয়ত বিস্ফোরিত হয়েছে। সারা রাতটা একটা আতঙ্কের মধ্যে কাটালাম। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে জগন্নাথ হলের দিকে তাকাতাম। কিন্তু সমগ্র এলাকাটা আগে থেকেই বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়াতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। রাতে জগন্নাথ হলের এলাকায় কি হচ্ছিল কিছুই দেখতে পারলাম না। শুধু গোলাগুলির শব্দ শুনছিলাম। কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে ওখানে দুপক্ষেই একটা ছোটখাটো লড়াই হচ্ছে। সাথে সাথে আমার ক্যামেরাটার কথা মনে পড়ে গেল। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সকাল হবে আর দিবালোকে আমি ছবি তুলতে পারব। আপনি যে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন তা কি বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল না? এমনভাবে ক্যামেরা বসান হয়েছিল যে বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই। কারণ পর্দার আড়ালে এমন ভাবে বসান হয়েছিল যে শুধু ক্যামেরার মুখ বের করা ছিল। পুরো ক্যামেরাটা কালো কাপড় দিয়ে মোড়ান ছিল। আমাদের জানালাগুলো এমনভাবে তৈরী যে বন্ধ করার পরেও ধাক্কা দিলে কিছুটা ফাঁক থেকে যায়। ঐ ফাঁক দিয়ে ক্যামেরার মুখটা বাইরে বের করে রাখলাম। ক্যামেরা চালু করেন কখন? সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম যে জগন্নাথ হলের সামনের মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদেরকে লাইনে দাঁড় করন হয়েছে, তখনই আমার সন্দেহ জেগে যায়। এবং আমি ক্যামেরা অন করি। আমাদের ক্যামেরাটির একটা বিশেষ গুণ এই যে, এতে মাইক্রোফোন দিয়ে একই সাথে শব্দ তুলে রাখা যায়। তাই আমি টেপের সাথে মাইক্রোফোন যোগ করিয়ে ক্যামেরা চালু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম যে ছেলেগুলোকে এক ধারছে গুলী করা হচ্ছে ও একজন একজন করে পড়ে যাচ্ছে। পাক সেনারা আবার হলের ভিতরে চলে গেল। আমি ভাবলাম আবার বেরিয়ে আসতে হয়ত কিছু সময় লাগবে। তাই এই ফাঁকে আমি টেপটা ঘুরিয়ে আমার টেলিভিশন সেটের সাথে লাগিয়ে ছবি দেখতে লাগলাম যে ঠিকভাবে উঠেছে কিনা। এটা শেষ করতেই আবার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম যে, আবার কিছুসংখ্যক লোককে ধরে নিয়ে এসেছে। আবার লাইন করে দাঁড় করান হচ্ছে। আমি তখন পূর্বের তোলা টেপটা মুছে ফেলে তার উপর আবার ছবি তোলা শুরু করলাম। আপনি পূর্বের তোলা ছবিটার টেপ কেন মুছে ফেললেন? আমার মনে হচ্ছিল আমার আগের ছবিতে সবকিছু ভালোভাবে আসেনি। আর নতুন ছবি তুলতে গিয়ে আমি হয়ত আরো হৃদয়স্পশী দৃশ্য ধরে রাখতে পারব। আর হাতের কাছে আমার টেপ ছিল না। মোট কথা আমি ঐ সমস্ত দৃশ্য দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাগলের মত হয়ে গেলাম। আজও দুঃখ করি যদি আমি নতুন টেপে ছবি তুলতে পারতাম তাহলে কত ভালো হতো। দুটো দৃশ্য মিলে আমার টেপের দৈর্ঘ্য বেড়ে যেত। কিন্তু তখন এত কিছু চিন্তা করার সময় ছিল না। যা হোক দ্বিতীয় বারের লাইনে দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছে। আমার মনে হচ্ছিল সে তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে