পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆ85, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শরোনাম সুত্র তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় পাক বাহিনীর | দৈনিক বাংলা ১৯ জানুয়ারী, ১৯৭১ হত্যাভিযান পচিশে মার্চ ও তার পরদিন মনজুর হাসান ॥ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম শহীদ মিনারের সামনে ৩৪ নম্বরের এক তলার ফ্লাট বাড়ীতে। আমাদের এ বিল্ডিং এর পশ্চিম দিকের তিনতলায় পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যক্ষ জনাব মনিরুজ্জামান সে রাত্রে বিছানায় যেয়েও ঘুমোতে পারেননি, একথা তাঁর স্ত্রীর কাছে শোনা। দিন কতক আগে এখানে রাস্তায় গাছ ফেলে যে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল সেনাবাহিনীর একদল প্রথমে তা কেটে সরিয়ে দিতে আসে। সেই সব ডালাপালা কাটার শব্দ হচ্ছিল। এর কিছু পরই পাক সৈন্যের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ শুরু হয়। ছাত্রাবাসগুলোর দিক থেকে সৈন্যদের গোলাগুলীর আওয়াজে মনিরুজ্জামান সাহেব অস্থির হয়ে ওঠেন এবং বদনায় পানি নিয়ে পরপর তিনবার ওজু করেন। এমন সময় জগন্নাথ হলের কাছে গর্জে ওঠে বর্বর পাক সৈন্যদের গোলার আওয়াজ। চারপাশে গোলাগুলীর শব্দে আমার ঘুম ঙ্গে যায় এবং পর মহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের পাশেই মনে হলো তোপধ্বনির আওয়াজ। আমি যে ঘরে ঘুমাতাম, তার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, তার দক্ষিণে শহীদ মিনার। সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে ঘর আলোকিত হয়ে উঠে মুহুর্তের জন্যে। আমি বিছানা থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ি। আমার ছেলেটিকে আমি আর আমার স্ত্রী মেঝেতে শুইয়ে চেপে ধরি। ছোট ছেলে ভয়ে একবার শক্ত হয়ে যাচ্ছিল আর শুয়ে থেকে শুধু কাঁদছিল। আমি মেঝেতে পড়ে থেকে কয়েক মুহুর্তে চিন্তা করতে চেষ্টা করছিলাম, কি হলো? চারদিকে অনবরত গোলাগুলির শব্দ আর রাস্তা দিয়ে ভারী গাড়ী চলার শব্দ পাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় জগন্নাথ হলের পূর্ব দিকে আমাদের ৩৪নং বাড়ীর গেটের ভিতরে তিনটি মিলিটারী গাড়ী ঢোকে। তারপরই ভারী বুটের শব্দ এবং আমাদের দরজায় লাথি ও ধাক্কা শুরু হয়- দরজা খোল, দরজা খোল’। ঠিক এর পরই সব ফ্রাটের দরজায় লাথি মারা আরম্ভ হয় গেছে এবং সব বাড়ীর কলিং বেলগুলো ওরা বাজাচ্ছে। মা, বোনেরা এবং ছোট ভাইটি অন্য ঘর থেকে ছুটে আমার ঘরে এলো। মা বললেন, ‘বাবা ও দিক দিয়ে দেখলাম, মিলিটারীরা বাড়ী ঘিরে ফেলেছে। আর বিল্ডিং-এর টেলিফোনের লাইনগুলো কেটে দিল। আমার ঘরে সকলকে মেঝেতে শুয়ে যেতে বললাম। মাকে বললাম ‘ওরা যদি দরজা ভেঙ্গে আসে তাহলে আসুক, দরজা খুলব না আমরা। বাড়ীতে আমার বয়সী এক আত্মিয় ছিলেন, উনি এই সময় বিল্ডিং এর ভিতরে বাঁচার আশা ত্যাগ করে বলতে লাগলেন, “আমি জঙ্গলে ঝোপের মধ্যে যেয়ে লুকাবো এবং ফ্ল্যাট ছেড়ে পিছন দিক দিয়ে বাইরে যেতে উদ্যত হলেন। আমি আর মা ওকে জাপটে ধরলাম। উনি বারান্দার নেট ছিড়ে ফেলতে উদ্যত হলেন। মা আর আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, যদি আমরা মরে যাই সবাই এক সাথে মরে যাবো। এমন সময় দুটো সৈন্য আমাদের জানালার পাশ দিয়ে দৌড়ে এসে ফ্ল্যাটের পেছনের দরজায় দাঁড়িয়ে গেল। দরজাটি ছিল বাগানে যাবার জন্য খুব কম মজবুত একটা প্লাইউড দিয়ে বানানো দরজা। আমরা বারান্দা থেকে