পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©©Ꮼ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাক সেনাদের হাতে লেফটেন্যান্ট কমাণ্ডার দৈনিক বাংলা ১৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ মোয়াজ্জেম হোসেন-এর বিয়োগান্ত বিবরণ চিরঞ্জীব শহীদের স্মৃতি লেফটেন্যান্ট কমাণ্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (লেফটেন্যান্ট কমাণ্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, তথাকথিত আগরতলা মামলার দুই নম্বর আসামী যার চোখে দেখেছি বাংলার ছবি, যার মুখে শুনেছি, প্রথম একদফা-বাংলার মুক্তির কথা, তিনি আজ কোথায়? ২৫শে মার্চের কালো রাত্রে কেড়ে নিয়ে গেল তাঁকে শূন্য করে আমার এ ঘর। আগরতলা মামলা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হতেই শুরু হয়েছিল তার অক্লান্ত পশ্রিম। অবশ্য তার পরিশ্রম অনেক দিনের। ছেলেবেলা হতেই জীবন যুদ্ধে নেমেছেন তিনি। আই,এস সি পাশ করেই তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। বিলেতে কেটে গেলো জীবনের ৯টি বৎসর। সেখান হতেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি। তারপর ছিলেন পাকিস্তানী নৌ-বাহিনীতে) ১লা মার্চ হতেই দেখলাম তাঁর মাঝে চঞ্চলতা, কর্মব্যস্ততা। ২রা মার্চ কয়েকজন সহকর্মীসহ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে এক বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। ওদিকে কেন জানি না আমার মন একটা অজানা আশংকায় কাঁপছিল বারবার। উনিও খবর পেয়েছিলেন দুদিন আসছে। তাই কিছুটা গোপনীয়তা অবলম্বন করতেই হলো। শুরু হলো লুকিয়ে কাজকারবার করার দিন। ১৫ই মার্চ তিনি ফিরলেন। ২৭শে মার্চ পল্টনে এক জনসভায় আয়োজন করা হচ্ছিল। ২৮শে মার্চ তার আর জীবনে আসেনি। ২৫শে মার্চ এলো সেই ভয়ংকর কালরাত্রি। কে জানত আমার এ জীবনের হাসি গান সবকিছু মুছে নিয়ে যাবে সেই রাত। অকালে আমার ঘর ভেঙ্গে যাবে’। ঘর ভাঙ্গবে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের । ২৫শে মার্চ সন্ধ্যা হতেই তিনি খুব ব্যস্ত। কিন্তু এত ব্যস্ততার মাঝেও মনে হচ্ছিল, উনি যেনো বড় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। রাত প্রায় ১১টায় ফোন বেজে উঠলো। আমার দুলাভাই ফোন করে ওকে সরে যেতে বলছিলেন। এমন সময় দুটো ছেলে সবাইকে ধাক্কা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে কাঁপতে লাগলো। তারা বললো মিলিটারী ওদের জীপের ওপর গুলীবর্ষণ করেছে। ওদের একজনের গায়ে জুর ছিল। আমরা সেবা যত্ন করলাম। পরে জেনেছিলাম আমরা সেই অজানা ভাইদের মধ্যে একজন জালেমদের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। সে রাত্রে আমরা উপর তলায় আমার এক বোনঝির ওখানে থাকি। নিস্তব্ধ রাত্রিকে সচকিত করে দিয়ে অবিশ্রান্ত ভাবে গোলাগুলি চলতে লাগলো। উনি একটা প্যাসেজে দাঁড়িয়েছেলেন। সারাটা রাত এমনিভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। কে জানতো সে রাত্রের সেই দাঁড়ানোই হবে মৃত্যুকে বরণ করার প্রতীক্ষা। ভোর হয়ে এলো। নীল আকাশের শুকতারাটি বিদায় ব্যথিত চোখে বুঝি বা শেষবারের মত মাটির পৃথিবীকে দেখে নিচ্ছিলো। এক সময় উনি এসে জানালায় মাথা দিয়ে ক্লান্ত অলসভাবে দাঁড়ালেন। আমি তাকে অনেকবার বলেছিলাম পিছনের পাঁচিল টপকে পালাতে। বললেন, কোথায় যাব। তাছাড়া যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বুঝেছিলেন জালিমরা তাঁকে না পেলে অবুঝ অসহায় শিশুদের উপর অত্যাচার করতে পাবে। তিনি পালালেন না। তাঁর ক্লান্ত ভাব দেখে তাঁকে শুতে বললাম। জবাবে উনি বললেন, অনেক কাজ, শোবার সময়