পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড
৩৫৮

 মানুষের মৃত্যু ভয়াল আর্তনাদের মধ্য দিয়ে ওপারে গিয়ে পৌঁছলাম। ওখানে কেটে গেলো তিনটি দিন। তারপর ফিরে এলাম আবার ঢাকায়। আমার বড় ভাই ডা: আমজাদ খবর পেয়ে ছুটে এসে নিয়ে গেলেন আমাদের। জালিমরা তারও সবকিছু পুড়িয়ে জ্বালিয়ে নি:স্ব করে দিয়েছে। তিনিও রাজবাড়ী ফরিদপুরের মুক্তি ফৌজের কমাণ্ডার ছিলেন এবং কয়েকটা অপারেশন করেছেন। এই হলো তাঁর অপরাধ। তাঁকেও পালিয়ে ফেরতে হচ্ছিল।

 অথচ আমাদের ফেলে তিনি, আমার অনুরোধ সত্ত্বেও, ওপারে যেতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। আমাদের জন্যই তাঁকে কিছুদিন আগে গ্রহণ করতে হলো একটা ছোট্ট চাকুরী, যাতে সরকার তার পরিচয় না পায়। নানা দুর্যোগ আর ব্যথার মধ্য দিয়ে কেটে গেল দীর্ঘ ৯টা মাস। পথ চেয়ে বসে থেকেছি মিছে আশা বুকে বেঁধে যদি আসেন তিনি। কিন্তু কই আজো তো এলেন না তিনি। বুকে আশা নিয়ে ছুটে এসেছি এই কর্মকোলাহলপূর্ণ নগরীতে যদি কেউ বলে আছেন তিনি।

 দেশ স্বাধীন হলো। খুশীর বন্যায় প্লাবিত হলো চারিদিক। শুকরিয়া করলাম খোদার দরগায়। তাঁর আদরের সাত বছরের শিশুকন্যা শিপু ফুঁপিয়ে শুধালো” মাগো সবাই আজ এতো খুশী, কিন্তু আমার খুশী লাগছে না কেন? আমার যে খালি বাপির কথা মনে হচ্ছে। কেন আজও তিনে এলেন না। কেন আমার বাপি নেই মা?” শিশুর মনের এই আকুল করা প্রশ্নের জবাব কে দেবে?

-মিসেস কোহিনুর মোয়াজ্জেম হোসেন