পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VIII বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড যেমন কোন ন্যায়সঙ্গত ব্যাখ্যা বা যুক্তি বাইরে থেকে সভ্য সমাজের পক্ষে উপস্থিত করা সম্ভব হয়নি, প্রেসক্লাবের ব্যাপারে তাই ঘটেছে। কেউ বলেছেন: সাংবাদিক সমাজকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্যে এটা ছিল তাদের আস্তানার উপর প্রতীক হামলা। আর এক লোক বলেন: প্রেসক্লাবে গেরিলারা প্রতি দিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন: সে রাতে প্রেসক্লাবে বহু সাংবাদক আটক পড়েছেন বলে কোন সূত্র থেকে খবর হয়তো সামরিক অফিসারদের কাছে পৌছেছিল। এই সুযোগটা তারা ছড়তে চায়নি এবং খবরটা দেরীতে তারা পায় বলেই ভোর রাতে আক্রমণ হয় । রাত তখন সাড়ে দশটা হবে, আমি প্রেসক্লাবের আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম। আর এই কারণেই সে রাতে ক্লাবে শেল নিক্ষেপের কারণ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করা আমার পক্ষে অনেকটা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৫শে রাতে প্রেসক্লাবে দু’টো রহস্যজনক টেলিফোন কলের উল্লেখ স্বাভাবিকভাবেই আসে। ক্লাবে প্রবেশের দশ মিনিট পরেই পরপর দু’টো কল আসে এক বিশেষ আধা-সাংবাদিকের নামে। এই ভদ্রলোক বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, উকিলদের লাইব্রেরী, সাংবাদিকদের আডডা ও অফিসারদের ক্লোজপার্টিসহ সর্বত্রই মোটামুটি পরিচিত। উর্দু প্রস্বর মিশ্রিত বাংলা ও ইংরেজীতে অপর প্রান্ত থেকে উক্ত আধা-সাংবাদিকের সন্ধান করা হচ্ছিল। ক্লাবের ম্যানেজার জনাব কুদ্দুস আমার হাতে ফোন তুলে দিয়ে বললেন: স্যার, চড়া গলায় কাকে যেন খুঁজছেন ভদ্রলোক। রুক্ষ কণ্ঠস্বর ও বিশেষ ভাষার ব্যবহার থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব যে, সামরিক ঘাঁটি বা সেনানিবাস থেকে কেউ টেলিফোন করছে। উক্ত আধা-সাংবাদিককে না পেয়ে সেই ভদলোক ক্ষেপে উঠেছিলেন ঠিকই, তবে কণ্ঠে তার নৈরাশ্যও ছিল। টেলিফোন কলের এই ঘটনা কোন অর্থ হয়তো বহন করে, তবে এ থেকে প্রেসক্লাব আক্রমণের কারণ সন্ধান করা কষ্টকর। এ সময়টা সমগ্র শহরের উপর সুপরিকল্পিতভাবে একযোগে আক্রমণ চলছে। তখনো ক্লাবের পেছনে বা সামনের দিকে গোলাগুলী আসেনি। তোপখানা রোডের কাছে ‘স্বরাজ” দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটা রিক্সাও ছিল না। কিন্তু সে সময় এই আঙ্গটায় কিছুসংখ্যক দুরন্ত যুবক অন্ধকারের মধ্যে সামরিক যান চলাচল বন্ধ করার জন্যে দ্রুত ব্যারিকেড তৈরী করছিল, ইট-ড্রাম কাঠের গুড়ি দিয়ে। একটা রিক্সা এসে সেখানে আটকা পড়ল। চালক তুরিত গতিতে রিক্সা ঘুরিয়ে মেডিক্যাল কলেজের দিকে ছুটলো। আমি জোর করে ধরে তাকে অনুরোধ করেছিলাম। আমাকে একটু আজিমপুরায় নামিয়ে দিন। পুরানো হাইকোর্টের প্রবেশ গেটের কাছে প্রথম বাধা পেলাম-গাছ আর ড্রাম ফেলে ব্যারিকেড করা হয়েছে। সেটা পেরিয়ে কার্জন হলের গেটের সামনে গিয়ে সম্পূর্ণ থেমে যেতে হল। অন্ধকার থেকে কয়েকজন লোক একে বলল, অন্য দিকে যান। আর্মি আসবে। সেখানেও ব্যারিকেড। রিক্সাওয়ালা বলল, স্যার, আমি আর যাব না ডর করছে। আমি তাকে ফিরিয়ে আনলাম সেকেণ্ড গেটের দিকে-আজিমপুরার বাসায় সে রাতে আর যাওয়া হল না প্রেসক্লাবের সম্মুখে আমাকে নামিয়ে রিক্সাওয়ালা উধাও হয়ে গেল।