পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড উপর স্প্রে করে আগুন ধরিয়ে দিত। বাধা পেয়েই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত এবং সঙ্গে সঙ্গে ষ্টেন আর রাইফেল শতকণ্ঠে গর্জে উঠত। বিদ্রোহীদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করার জন্যেই যে কেবল এভাবে অজস্র গুলী ছোড়া হত তা ট্রিগার টিপেছে। রাত প্রায় তিনটার দিকে বড় রাস্তা থেকে ক্লাব বিল্ডিং লক্ষ্য করে কয়েকজন সৈন্য গুলী নিক্ষেপ করে। তখনো আমি ভাবতে পারিনি যে, এটা প্রেসক্লাবের উপর আক্রমণের ওয়ার্নিং। ব্যারিকেড উঠিয়ে বা পুড়িয়ে দিয়ে যাওয়ার পর সৈনারা কেউ থাকত না। দশ মিনিটের মধ্যেই পাশের গলি থেকে কিছু লোক ইট, কাঠের টুকরো, টিন এমন কি ছোট ছোট আস্ত পান-বিড়ির দোকান তুলে এনে রাস্তা বন্ধ করে দিত। এটা ছিল তাদের জন্যে অসহ্য এবং কাউকে নাগালের মধ্যে না পেয়ে অন্ধকারে গুলী ছোড়া ছাড়া পথ ছিল না। কিন্তু প্রেসক্লাবের পাশের গলিতে ঢোকার সাহস তাদের ছিল না। আমি ভেবেছিলাম ক্ষিপ্ত ইয়াহিয়া-সৈন্যের এই জাতীয় গোলাগুলীর অংশ ক্লাবে এসে পড়েছিল। নাগরিকদের উপর আক্রমণের তোড়াটা তখন ছিল অনেক বেশী এবং সে সময় অসহায় হাজার হাজার নগরবাসীর কণ্ঠে ছিল নাগরিক এই করুণ ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এর একটু পরই প্রেসক্লাবের উপর আক্রমণ চালানো হয়। অন্ধকার কক্ষের মধ্যে আমি তখন একটা সোফা ছেড়ে আর একটায় গিয়ে বসছিলাম। বেরিয়ে পালিয়ে যাবার কোন উপায় তো তখন ছিল না-একটার পর একটা চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে তুলছিল। ২৪ তারিখ রাতে ৩২নং রোডের বাড়ীতে শেখ সাহেব সাংবাদিকদের একটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেছিলেন: আলোচনা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বলে ওরা সময় পাচ্ছে। এই যদি মনে কর-তবে আমি কি সময় পাচ্ছি না? ভাবছিলাম যে সময় তিনি পেয়েছেন তাচব্বিশ ঘন্টা পর অত্যাধুনিক সেনাবাহিনীকে রোখার জন্যে যথেষ্ট কি না। আমার চিন্তার সূত্র ছিন্ন করে একটা ট্যাঙ্কের শব্দ ভেসে আসলো। ছুটে গেলাম একটা জানালার কাছে। সে রাতে এই প্রথম একটা ট্যাঙ্ক দেখলাম! কমিশনার অফিসের অঙ্গন থেকে ছোট একটা ট্যাঙ্ক (এম ২৪) গর্জন করে ইউসিসের সামনে এসে দাঁড়াল। করছে। তখনও আমি ভেবে উঠতে পারিনি যে, প্রেসক্লাবের উপরও তাদের সরাসরি আক্রমণ চলবে। কিন্তু পরমুহুর্তেই ভাবলাম সব অবিশ্বাস্য ঘটনাই তো তাদের দ্বারা আজ রাতে সম্ভব হয়েছে। কক্ষ থেকে বের হবার প্রশ্ন ওঠে না। বাথরুমের ব্যাকস্টেয়ার দিয়ে বেরিয়ে যাবার কথা ভাবলাম। ইয়াহিয়ার কার্টুন আর সরকারবিরোধী শ্লোগান খচিত। পেছনের সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে দেখলাম হাতল নেই-অন্ধকারে আমার চেষ্টা করা অসম্ভব। কক্ষের দিকে ফিরে আসার সময় ফেস্ট্রনগুলো টেনে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। সমস্ত ঘটনাটাই মিনিটখানেকের মধ্যে। আমি তখনো সোফার কাছে এসে পোছাইনি একটা ভয়াবহ শব্দ করে প্রথম শেল এসে কক্ষের মধ্যে পড়ল। কোন কিছু চিন্তা করার পূর্বেই একটা ইসপ্লিন্টার প্রচণ্ড বেগে আমাকে উপড়ে ফলল ফ্লোর থেকে এই