পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԾՆ5, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পর প্রতি চারজন অফিসারকে এক একটি দড়িতে বেঁধে নিয়ে একই জায়গায় হত্যা করতে থাকে। পরে অন্যান্য সকলকে এক একটি দড়িতে (১৪ জনকে) বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। এর মধ্যে কর্ণেল জাহাংগীর, ইয়াকুব আলী, মেজর হাসিব, লে: বাতেন, ইঞ্জিনিয়ার্সের একজন কপ্টেন, ব্রিগেডিয়ারের সহকারী কেরানী, নায়েব সুবেদারসহ ১৫ জন কেরানীকে আমি চিনতে পারি। এভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর ১২ জন বেসামরিক লোক থেকে যায়। সন্ধ্যার ঠিক পরপরই একটি পাঞ্জাবী নায়েক আমাদের ঘরের পিছনের জানালা দিয়ে চুপি চুপি ডেকে আমাকে বলে যে, “তুমি ঘাবড়িওনা তোমায় কিছু করা হবে না ব্রিগেডিয়ার সাহেব বলেছেন।” এ পর্যন্ত বলে রমনী শীল জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকার সেই স্মৃতিচারণ করেন। এর মধ্যে নায়েকটি পুনরায় অভয় দিয়ে যায়। রমনী শীল জানান তার সংগে যে, ১২ জন বেসামরিক লোক ছিল তারা হচ্ছেন ইস্পাহানী হাই স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষের দুই পুত্র, রমনীসহ চারজন নরসুন্দর ও ছয়জন ঝড়ুদার। সেই কালো রাত্রি কিভাবে তারা কাটিয়েছে তার বর্ণনা দেওয়া তখন তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। একদিন ভোরে মুজাহিদ বাহিনীর সেই জল্লাদ ক্যাপ্টেন মন্তাজ এসে এই বন্দী ১২ জনের সবাইকে ব্রিগেডের কর্মচারী বলি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, এবং নিজ নিজ কাজে যোগ দেওয়ার জন্য হুকুম দেয় । সে সময় সহকারী অধ্যক্ষের দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যখন জানতে পারে যে, তারা ব্রিগেডের কর্মচারী নন, ঠিক তখনই তাদেরকে ঐ গর্তের পার্শ্বে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রমনী শীল জনান যে সারা দিন চোখের সামনে শত শত বাংগালী হত্যার দৃশ্য দেখা এবং সেই সংগে কালো রাত্রিটি অতিবাহিত করা যতটা অসহনীয় ছিল তার চাইতেও কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ালো যখন তাকে ঐ সময়ই উপস্থিত জল্লাদদের দাড়ি কাটার নির্দেশ দেওয়া হলো। অশ্রুসিক্ত রমনী শীল আরো জানান যে, তিনি শুধু বিগ্রেড হেডকোয়ার্টারের লোকজনকে হত্যা করতে দেখেননি, ব্রিগেড হেকোয়ার্টারের বিপরীত দিকে ২৪ নং এফ, এফ রেজিমেন্টের গার্ডে ক্যান্টনমেন্ট-এর বিভিন্ন ইউনিট হতে জমাকৃত কয়েকশত বাংগালীকে ফতেহ মোহাম্মদ ষ্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। এই কাহিনী বলতি গিয়ে রমনী শীল কখনো হু হু করে কেদে ফেলেছেন, কখনো এমন ভাব দেখিয়েছেন যেন এটা একটা মামুলী ব্যাপার, আবার কখনো চুপচাপ “থ” হয়ে গেছেন। তিনি গভীর দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে বলেন, “বোধ হয় এসব দেখার জন্যই আমি শত শত মৃত্যুর মাঝেও বেঁচে ছিলাম এবং এখনও আছি। আমার বাসা ও ব্রিগেড ডেকোয়ার্টারের মাঝামাঝি জায়গাতেই লে: কর্ণেল জাহাংগীরসহ ২৪ জন অফিসার ও শতাধিক অন্যান্য বাংগালীকে একটি গর্তে মাটিচাপা দিতে দেখি । ঐ সব লোককে মাটাচাপা দেওয়ার সময় গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে কয়েকজন নরখাদক ক্ষেীর কর্ম করতে হয়। সেখান থেকে দেখতে পাই ফতেহ মোহাম্মদ ষেটডিয়ামের দক্ষিণ পাশের গর্তে নিক্ষিপ্ত কয়েকশত মৃত দেহের উপর পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। পরে বুলডোজারের সাহায্যে গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়। রমনী শীল বলেন, সে সব মৃত দেহের কংকাল আমি একনো মাটি খুঁড়ে তুলে দিতে পারব। আড়াই দিন অনাহারে থাকার পর রমনী শীল তার বাসায় পৌছার সময় দেখতে পান একটি বৃহদাকার ট্রাক ভর্তি মৃতদেহ (সম্ভবত: কুমিল্লা শহর থেকে আনা) সেই ফতেহ মোহাম্মদ ষ্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাকটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সমস্ত রাস্তাটি রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। গত এপ্রিল মাস থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ এফ, আই ওতে কাজ করার সময় তিনি যে দৃশ্য দেখেছেন তার বর্ণনা প্রসংগে রমনী শীল বলেন, এফ, আইওর অত্যাচার থেকে ব্রিগেড অফিসের সামনের হত্যাকাণ্ড অনেক ভাল