পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ছিল। মেজর সেলিমের এফ আইও ইউনিটে যাদেরকে একবার নেওয়া হয়েছে, কাদের মধ্যে খুব কম লোকই ফিরে এসেছে। গত আগষ্ট মাসে রমনী শীল সি, এম, এইচ, এ বদলী হন। সেখানে তার বাসগৃহের পাশেই হানাদার সৈন্যদের লাশ কবর দেওয়া হত। এই সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রমনী শীল উৎসাহব্যঞ্জক কণ্ঠে বলেন, সারাদিন কাজ করেছি আর সন্ধ্যায় ঘরে বসে পাক হানাদারদের কবরের সংখ্যা গুনেছি। লক্ষ্য করতাম দিন দিন তাদের কবরের সংখ্যা বাড়ছে। রাত্রে এ সমস্ত কবর খনন করা হত। এ দ্রশ্য মনে আশার আলো নিয়ে আসত। মনে মনে ভাতাম, যে নির্যাতন ও রক্ত ক্ষয় দেখেছি, তা বৃথা যায়নি। প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে। তা নাহলে শত শত পাক সেনা কি ভাবে লাশে পরিণত হচ্ছে। -দৈনিক বাংলা, ২১ জানুয়ারী, ১৯৭২ শুধু কংকাল আর কংকাল কুমিল্লা, ২৯শে জানুয়ারী। টিক্কা নেয়াজী ফরমান আলীর নরপশুরা ঠাণ্ডা মাথায় বাঙ্গালী নিধনের পৈশাচিকতায় ইহুদী হত্যাযজ্ঞের নায়ক আইকম্যানকেও হার মানিয়েছে। জল্লাদ পাক বাহিনী যে কি নির্মম, কি বর্বর আর পাষণ্ড ছিল তা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের হাজার হাজার বাঙ্গালীর কংকাল, সামরিক, বেসামরিক পোশাক, খসে পা মাথার চুল, হাত, পা বাঁধা অবস্থায় বিকৃত লাশ, চোখ বাঁধা অবস্থায় কংকাল নিজ চোখে না দেখলে অনুমান করাও সম্ভব নয়। ময়নামতী পাহাড়ের গর্তে লুকায়িত ছিল প্রাচীন সভ্যতার অনেক প্রতীক। ইতিহাসের পণ্ডিত ব্যক্তিগণ প্রত্নতাত্ত্বিকের সভ্য জগতের নিকট গর্বের সঙ্গে এ বহু প্রাচীন সভ্যতার দ্বার খুলে আজকের সুসভ্য মানব জাতিকে দেখাচ্ছেন হাজার হাজার বছর আগেও এ অঞ্চলে ছিল সুসভ্য সংস্কৃতিবান একটি জাতি। কিন্তু এই ময়নামতিতেই হানাদার বাহিনী গত ২৫শে মার্চের পর থেকে যে হিংস্রতা আর বর্বরতার প্রমাণ রেখে গেছে গভীর কম্যাণ্ড পোষ্ট অগভীর মাটির নীচে, গর্তে এবং জংগলের মধ্যে, আজকের মানুষই শুধু নয়, ভরিষ্যতের মানুষও তা দেখে ঘৃণায় আর ভয়ে শিউরে উঠবে। বস্তুত: গোটা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টই ছিল একটি কসাইখানা। কসাই ছিল হানাদার বাহিনী আর তাদের দালালরা। সেখানে তারা খুন করেছে হাজার হাজার বাঙ্গলীকে। সেই বদ্ধভূমিটা আজ একটা কবরস্থান। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকাটা পাহাড়ি অঞ্চল। উচু নিচু। কোথাও কিছুটা সমতল ভূমি। ঘন শণ আর কাশ বনে ভরা। গত শনিবার শ্রী রমনী শীলকে নিয়ে আমি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌছি। ক্যান্টিন পেছনে রেখে কয়েক গজ এগুনোর পরই হাতের ডান দিকে আমাকে দুটো কম্যাণ্ড পোষ্টের গর্ত দেখান। মাটি সরিয়ে সেখানে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর দেখতে পাই তা যেমন ভয়ংকর তেমনি মর্মবিদারক। কংকাল। অনেকগুলোর উপরই সামরিক পোশাক। আর আছে সামরিক টুপি, কোমরের বেল্ট, সামরিক পরিচয়ের প্রতীক। পরে কুমিল্লা পুলিশ সুপার শ্রী চিত্তাবিনোদ দাস জানান, এ গর্তটিতে পে বুক, চেক বই, কলম, হাতের ঘড়ি, চশমা, টুপি ও নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু টাকা পাওয়া গেছে।