পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○a○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ নারায়ণগঞ্জে দ’জন ছাত্রের হত্যা কাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক ৫ জানুয়ারা, ১৯৭২ তোমাদের খুনে পবিএ এ মাটি “ওরা আমাকে গুলী করেছে। ডাক্তার ডাকো, ডাক্তার” বলেছিল নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি ১৮ বছরের তরুণ মোশাররফ হোসেন মাশা। ২৭শে মার্চ হানাদার বাহিনীর গাড়ীর শব্দে নারায়ণগঞ্জের স্তব্ধ পরিবেশ ভেঙ্গে গেল। শহরের উপকণ্ঠ জামতলায় সবাইকে নিয়ে মোশাররফ হোসেন মাশা প্রস্তুত হয়েই ছিলো। ওদের রাইফেল গর্জে ওঠে। হানাদার বাহিনী থমকে দাঁড়ায়। ২৯শে মার্চ হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করলো। মর্টারের গর্জনে ট্যাঙ্কের নিনাদে ভীতসন্ত্রস্ত শহরবাসী পালাতে থাকে শহর ছেড়ে। এতদিনের জনকোলাহল মুখ শহরে নেমে এলো মৃত্যুর বিভীষিকা। তখন সবেমাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। হানাদার বাহিনীর গাড়ীগুলো ঘুরছে এদিকে-সেদিকে । মাশা টান বাজারে ওদের কার্যলয়ে চিন্তাক্লিষ্ট মুখে সহকর্মীদের নিয়ে ভাবছে কি করা যায়। এমন সময় নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন জনৈক কুখ্যাত দালালের ইঙ্গিতে হানাদার বাহিনী ওদের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ওদের আক্রমণ করলো। হানাদার বাহিনীর গুলীতে আহত হয়ে মাশা ঢলে পড়ে। মাশার বুকের রক্তে ভিজে যায় কার্যালয়ের কক্ষতল। আহত মাশার বুক চেপে ছুটে যায় ওর মা বাবার কাছে । বলে, ডাক্তার ডাকো-আমি বাঁচবো, আমাকে বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে আমার সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গলী ভাই-বোনকে। কিন্তু কোথায় ডাক্তার! শহরে তখন ভীতির রাজত্ব, চারিদিকে তখন আর্ত মানুষের মরণ হাহাকার। ডাক্তারের অভাবে রাত ১ টায় এই তরুণ দেশপ্রেমিকের প্রাণবায়ু বেদনা ব্যথিত বাংলার আকাশে মিলে গেল। শহরের স্তব্ধ পরিবেশে জেগে উঠলো আর একটি আর্ত চীৎকার। বিভিন্নমুখী প্রতিভার অধিকারী মশা কেবল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই সুনাম অর্জন করেনি, বিদ্যালয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রেও তার প্রতিভার পরিচয় ভাস্বর হয়ে আছে। মাশা আজ আমাদের মধ্যে নেই। ও কি জানতো, এমনি করে ওকে বিদায় নিতে হবে, ওর এত প্রিয় বাংলাদেশ থেকে। ও কি ভেবেছিল ওরা আসবে, নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে ওদের ভিক্ষা করে আনা অস্ত্র নিয়ে। কিন্তু ওরা এলো। ২৮ শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ওদের উপর হীন আক্রমণ চালালো। চিত্ত বীরের মতোই তাদের আটকাতে গিয়েছিল। গর্জে উঠলো হানাদার বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র। চিত্ত ঢলে পড়লো ওদের টানবাজারের ছাত্রলীগের কার্যালয়ের কক্ষতলে। হানাদার বহিনী একটি গুলী করেই ক্ষান্ত হয়নি, পরপর চারটি গুলী করেছে, ওর মৃতদেহটি কার্যলয়ে আগুন ধরিয়ে তার মধ্যে ছুড়ে দিয়েছে। বন্দর হাইস্কুলের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কর্মবীর এবং দেশভক্ত চিত্তকে আমরা ভুলব না।