পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳ8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড “অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নরপশুরা’ দৈনিক বাংলা ২০ জানুয়ারী, ১৯৭২ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নরপশুরা ওরা যখন ওদের ফুপার রক্তাক্ত লাশ জড়িয়ে কাঁদাছিল তখন পাশেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনটি নরপিশাচ অট্টহাসি দিয়ে ওদের বিদ্রুপ করছিল। ২৭শে মার্চ শনিবার । হানাদার বাহিনীর ৬টি জীপ ঢাকা থেকে নদী বন্দর নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়ে দীর্ঘ ১০ মাইল পথের দু’পাশেই চালিয়েছিল হত্যাযজ্ঞ। কামানের গোলা আর মর্টারের শেল দিয়ে জুলিয়ে একাকার করিয়ে দিয়েছিল অসংখ্য ঘরবাড়ী। অবশেষে নারায়ণগঞ্জ শহর উপকণ্ঠে এসে জেটি মাসদাইরে প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। অকালে ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুক থেকে। মাসদাইরেই ছিল জনাব জসিমুল হকের বাড়ী। তিনি ছিলেন জামিল ডকইয়ার্ডের মালিক। নারায়ণগঞ্জ শহরে সকলের পরিচিত। জনাব জসিমুল হক ও তার স্ত্রী হত্যা সম্পর্কে কিছু জানার জন্য আমি তাদের মাসদাইর গ্রামের বাড়ী যাই। বাড়ীতে কেউ ছিল না। ছেলেমেয়েরা সবাই অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছিল হীরা নামে একটি কিশোরী। মিসেস হক তার ফুফু। হীরাও সেদিন জনাব হক এবং ফুফুর সাথে মৃত্যুর সারিতে দাঁড়িয়েছিল। তার চোখে আজও সেদিনকার ভয়ংকর দৃশ্য ছবি হয়ে আছে। কেমন করে হীরা বেঁচে গিয়েছিল এখন সে তা ভাল করে বলতে পারে না। কিন্তু সেদিনকার ভয়ংকর দৃশ্য সে ভুলতে পারেনি মোটেই। হীরা বলেছিল ২৭শে মার্চের দুটোয় সাত-আটজন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়ীতে হানা দিয়ে চারিদিকে গুলী করতে থাকে। তখন ঘরের মেঝেতে আমরা সবাই শুয়ে পড়ি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজার সামনে রাইফেল ও এল, এমজি নিয়ে এসে হানাদারেরা গালাগালি দিতে দিতে আমাদের ঘরের বাইর আসতে বলে। আমরা একে একে বাইরে আসি। হানাদারেরা আমাদেরকে বাইরে এনে আংগিনায় দু’সারিতে দাঁড় করায়। পাশের বাড়ীর লোকজনও ওদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওদের সবাইকে ওরা হত্যা করে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে। অবশ্য তার আগে টাকা পয়সা লুট করতে ওরা ভুলেনি। হীরার ফুফু আসমাও রেহাই পাননি। তার বুকে বেওনেট চার্জ করে পরে গুলী করে তাকে হত্যা করে। আমি আর শেলী (ফুফাতে বোন) তখন ফুফার লাশের কাছ থেকে বাড়ীর ভিতরে ফুফুর খোঁজে এসে এই ঘটনার সম্মখীন হই। আমাদের দেখে ফুফু আম্মা ডাক্তার ডাকতে বলে আলমারি থেকে “নভালজীন” ট্যাবলেট দিতে বলেছিলেন। তখন ফুফু আম্মার শরীর থেকে রক্তের স্রোত বইছিল। শেলী কাপড়চাপা দিয়ে ক্ষতস্থানের রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। টিলিফোনে ডাক্তার ডাকছিলাম। ডাক্তার পেয়েছিলাম, কিন্তু এলাকাটার নিরাপত্তার কথা ভেবে ডাক্তার আসেননি। তখন চারিদিকে গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ আর মৃতপথযাত্রীদের যন্ত্রণা ও চীৎকার যেন এক প্রলয় বইছিল বাইরে।