পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳՏ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ “জল্লাদেরা স্বামীর লাশটাও আমাকে দেখতে দিল | দৈনিক বাং ১৯ জানুয়ারী, ১৯৭২ না” কান্নায় কণ্ঠরোধ হয়ে এলো মিসেস আহমদের জল্লাদেরা স্বামীর লাশটাও একবার আমাকে দেখতে দিল না সে হৃদয়বিদারক হত্যার বর্ণনা যখন শেষ হলো মিসেস কামরুন নাহার আহমদের দুগণ্ড বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। তীব্র শোকে বেদনায় বার বার রুদ্ধ হয়ে আসছিল তার বাকশক্তি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন: তাঁকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এত দিনের তিলে তিলে গড়া সংসারের সবকিছু ফেলে শহর ছেড়ে দূরের গাঁয়ে পালিয়েছি। কিন্তু জল্লাদ সেনাদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচাতে পারলাম না। ব্যাঙ্কের চেকটাই তাঁর মৃত্যুর পরওয়ানা হয়ে ফিরে এলো। মিসেস কামরুন নাহার আহমদ সাবেক পূর্ব পাকিস্তান রেলের চীফ পারসোনেল অফিসার মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমদের স্ত্রী। তাঁদের বাসা ছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনীতে। গত ১১ই মে রাউজানের ডাবুয়ার্গ থেকে খান সেনারা তাকে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করে। বিপ্লবী বাংলার বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। বীর চট্টলার মার্চ এলো বিপ্লবীর বান নিয়ে। সর্বত্র অসহযোগ। রাস্তায় রাস্তায় বীর জনতার মিছিলে সমারোহ জনতার পদভারে বন্দর নগরী প্রকম্পিত। বিপ্লব আর বিদ্রোহের গানে দশদিক মুখরিত। সংগ্রামের উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলছিলেন বীর চট্টলার অধিবাসীরা। সংগ্রাম মুখর সে নগরীর লাখো পরিবারেরই একটি নাসিরউদ্দিন আহমেদের পরিবার। তারপর এলো ২৫শে মার্চ খানা সেনারা নেকড়ে বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র বাঙ্গালদদের উপর। এক পৈশাচিক নরহত্যাযজ্ঞে মেতে উঠলো তারা। বাঙ্গালীর রক্তে হলি খেললো দসু্য সেনারা। মিসেস কামরুন নাহার আহমদ স্বচক্ষে দেখলেন এই হত্যাযজ্ঞ। সেই বীভৎস দিনগুলোর কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে কামরুন নাহার আহমদ যেন আমাকে নিয়ে গেলেন এক প্রেতপুরেতে। একের পর এক তিরন ঘটনার বর্ণনা দিতে লাগলেন আর আমি যেন মানসচক্ষে দেখতে পেলাম হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের এক লোমহর্ষ চিত্র। কামরুন নাহার আহমদ বললেন, আমরা থাকতাম পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনীতে। রেলের অবাঙ্গালকির্মচারীরাই সংখ্যায় বেশী ছিল সেখানে। ২৫শে মার্চের আগে আমরা তাদের রক্ষা করেছি। কিন্তু ২৫শে মার্চের পরে ঘটনা প্রবাহ ঘুরে গেল। তারা হামলা চালালো আমাদের উপর। লুটতরাজ, নরহত্যা আর নারী নির্যাতন চললো নির্বিচারভাবে। তারপর এলো ২৭শে মার্চ, দসু্য বাহিনী শুরু করলো বোমা বর্ষণ হোসেন গ্লাস ফ্যাক্টরী, ম্যাডিকেল কলেজ ও কালুরঘাট এলাকায়। একত্ৰিশে মার্চ খান সেনাদের পুরাপুরি দখলে চলে গেল চট্টগ্রাম নগরী। আবার শুরু হলো বাঙ্গালী নিধন। ২রা এপ্রিল আমরা বাসা ছেড়ে পাশের এক বাড়ীতে আশ্রয় নিলাম। কারণ খান সেনারা আর অবাঙ্গালীরা আমার স্বামীকে খুঁজছে। তার অপরাধ ছিল বাঙ্গালী কর্মচারীদের সাথে কথা বলতেন। বাংলার স্বাধীনতার স্বপক্ষে গোপনে কাজ করতেন।