পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○brb বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড সাভারের দায়িত্বশীল ও নেতৃস্থানীয় লোকদের মুখ মনে করলেই স্ত্রী বিরেন্দ্র কৃষ্ণ রায়ের কথা প্রথমে মনে পড়ে। ১৯৭১ সালে সাভারের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রাণপণ লড়েছেন তাঁদির মধ্যে রয়েছেন জগদীস সাহা, ডা: গুরুদাস সাহা এবং বিরেন্দ্র কৃষ্ণ রায়। কিন্তু আজ? সে আজ পুত্র শোকাতুর। সাভারে নিহতদের মধ্যে অন্যতম হরিপদ মজুমদার ও বিরেন্দ্র বাবুর বাড়ী পাশাপাশি। পাশাপাশি একজন বাস করছে স্বামীহারা অবলা নারী। অপর জন পুত্রহীরা নারী। এমন স্বামীহারা, পুত্রহারায় আজ বাংলার বুক ছেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ছেলে নির্মল রায়। বয়স মাত্র ৩২ হয়েছিল। ঢাকাতে দুলিচান ফার্মের গোডাউন ইনচার্জ। একজন ভাল খেলোয়াড়। স্থির বিনম্র দৃষ্টি মিষ্টি ব্যবহার। সাভারের নির্মল রায় নামটি বললে সবার মানসপটে ভেসে ওঠে সে নির্মল রায়। আজ আমাদের মধ্যে নেই। হারিয়ে গেছে লক্ষ হতভাগ্যের মাঝে। ৮ই ডিসেম্বর। ভোর রাত। অন্যান্যসহ নৰ্মিলও তখন রয়েছে ঘুমিয়ে। হঠাৎ বাহিরে বিকট আওয়াক। সকলেরই ঘুম ভেংগে গেল। উঠে দাঁড়াতেই দেখা গেল চারদিকে কুখ্যাত আল-বদর পাক বাহিনীর কয়েকজন তাদের সবার দিকে অস্ত্র নিশানা করে দাঁড়িয়ে হিংস্র দৃষ্টিতে আপাদমস্তক অবলোকন করছে। তারপর নির্মলসহ অন্যান্য কয়েকজনকে পাশেই এক বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাওয়া হল। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ। তারপর কয়েকটি গুলির আওয়াজ এবং সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়বিদারক চীৎকার। তারপর গভীর নীরবতা, সব শেষ। ছেলের এমন মৃত্যকাহিনী বলতে এক সময় নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না বিরেন্দ্র রায়। ছেলের ছবি বুকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। “যে নির্মল আজীবন স্নেহ লালিত্যে মানুষ, একটা কটু কথা বলা যার অভ্যাস নেই আর আজ আমার নির্মলের এ কি পরিণতি।” সূর্য কান্ত রায়। শেষ বয়সী ভদ্রলোক। উক্ত ফার্মের একজন পদস্থ কর্মচারী। সূর্য কান্ত রায়ের স্ত্রী তার একখানা ফটো বের করে দিলেন। তারপর বিলাপ এবং কান্না। উমেশ চন্দ্র সাহা। বয়স মাত্র ২৮ বৎসর। সংসারের দারিদ্রকে কাটিয়ে উঠতে ম্যাট্রিক পাশ করার পরেই এই ফার্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঐ একই দিনে তাদের শরীক হতে হয়েছিল জয় গোপাল সাহার। ব্যাক্তিগত জীবনে ছিলেন ধীর, হীর, নম্র, শান্ত এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী। সর্বশেষ যে মধ্য বয়সী ব্যক্তি তিনি হচ্ছেন মতিলাল সাহা। দুলীচাঁদ ফার্মেরই একজন কর্মচারী। বর্বরদের হাত হতে রেহাই পাননি, ওদের সবার সাথে মতিলাল সাহার আত্নাহুতি দিতে হয়েছিল ৮ই ডিসেম্বরের কালো রাতে।