পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ কিশোরগঞ্জের হত্যাযজ্ঞ দৈনিক বাংলা ৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ কিশোরগঞ্জে হত্যাযজ্ঞ সেই রাতে ধুলদিয়া রেলওয়ে পুলের উপর সবাইকে লাইন করে গুলি করা হলো (নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত) কিশোরগঞ্জ, ২রা ফেব্রুয়ারী। কিশোরগঞ্জে বর্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক নরপশু মেজর ইফতেখার সম্পর্কে দু’ একটি তথ্য দৈনিক বাংলা-এর ২৪শে জানুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এই জঘন্য পশুর পাশবিকতা কিশোরগঞ্জে যে, বিভীষিকা ও ভয়াবহতার সৃষ্টি করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। ১৯৭১ সনের জুলাই মাসের শেষের দিকে এই নরাকৃতি পিশাচ কিশোরগঞ্জে আসে। সে এখানে এসেই শুরু করল তার নরমেধযজ্ঞ। প্রত্যহ ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, এমনকি আরও বেশী করে লোক ধরে ধরে এনে মারতে শুরু করল। বলা বাহুল্য অধিকাংশ লোকই হিন্দু। কাজেই হিন্দু অধিবাসী যারা কিছুটা নির্ভয় হয়েছিলেন, তারা শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করলেন। অনেকে প্রায় ভয়ে মুসলমান হতেও শুরু করলেন। ইফতেখার দেখল হিন্দু আর পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই তার গণহত্যার পরিধি বিস্তৃততর করার জন্য এই নর-শয়তান তথাকথিত শান্তি কমিটির মাধ্যমে হিন্দুদের আহবান করল এই বলে যে, নির্দোষ কোন লোককে কোন রকম হয়রানি করা হবে না, হিন্দুরা যেন নির্বিঘ্নে নিজ নিজ কাজ শুরু করে। শয়তান দলের এই কপটতায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে শহরে ফিরে এলেন। ভয়ে ভয়ে শহরে নিজ নিজ কাজ শরু করলেন। ইফতেখার আর এক ফরমান জারী করল যে, এইভাবে নরপিশাচ তার হত্যাযজ্ঞ বিস্তৃত করা প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করল। শয়তানের কপটতায় বিশ্বাস করায় প্রথম বলি হলেন বাবু গিরিজা মোহন চক্রবর্তী। এ ছাড়া কত অসংখ্য মানুষ যে নরপিশাচের হাতে প্রাণ খগেন্দ্ৰ নাথ লৌহ নামক এক ভদ্রলোক অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই । একটা ক্ষুদ্র চায়ের দোকান চালাচ্ছিলেন, তিনি, পরিবারের অন্ন সংস্থানের একমাত্র অবলম্বন রুপে। নরপিশাচ ইফতেখার হঠাৎ এক রাতে হানা দিয়ে এই পরিবারের সকলকে ধরে নিয়ে গেল। এই সঙ্গে ধরা পড়ল হরিমোহন নামে বৃদ্ধ একজন মেইল রানার। শয়তান কাউকে রেহাই দেয়নি। নৃশংসভাবে এদের সকলকে হত্যা করে। এদের মধ্যে খগেন বাবুর জ্যেষ্ট পুত্র কাজল লৌহ যেন অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়ে গেল। কাহিনীটা তার কাছ থেকেই শোনা গচিহাটা রেলষ্টেশনের সন্নিকটে ধুলদিয়া রেলওয়ে পুলের উপর সকলকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে জল্লাদরা গুলি করে হত্যা করেছে সকলকে। গুলি করার সময় কাজল লাফ দিয়ে নীচে পানিতে পড়ে যায়। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে পিশাচরা পানিতে অসংখ্যবার গুলি ছুড়েছে। কিন্তু রাখে আল্লা জমায় সীমান্তের ওপারে। কাজল ফিরে এসেছে। কিন্তু গোটা পরিবারটা যেন ছত্ৰখান হয়ে গেছে।