পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8の8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড অশ্বিনী বাবু একজন গোবেচারা বৃদ্ধ আইনজীবী। স্বামী, স্ত্রী ছিলেন কিশোরগঞ্জের বাসায়, দুই ছেলে প্রবীর ও সুবীর প্রবীর বি, এসসি, পাশ করে শিক্ষকতা করছিলেন করিমগঞ্জ স্কুলে, আর তার ছোট ভাই সুবীর কলেজে পড়তো। পিশাচ ইফতেখার এক রাতে অশ্বিনী বাবুকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে আসে। তারপর বন্দুকের নলের মুখে অশ্বিনী বাবুকে দিয়ে দুই ছেলের কাছে চিঠি লেখায় ওদের কিশোরগঞ্জে আসার জন্য । পিতৃভক্ত দুই ভাই-ই এসে জল্লাদের ফাঁদে পা দেয়। দুটো ছেলেকেই এই নরঘাতক হত্যা করে, অশ্বিনী বাবুকে ছেড়ে দেয়। অশ্বিনী বাবু আজও বেঁচে আছেন, তবে সে বাঁচা বাঁচা নয়- জীবন্মত অবস্থা। শোনা যায় অশ্বিনী বাবুর দেশের বাড়ী ও সম্পত্তির লোভে জনৈক দালাল ইন্ধন যুগিয়ে ইফতেখারের মত নররাক্ষসকে দিয়ে বৃদ্ধের দুটো ছেলেকেই খুন করিয়েছে। পাকুন্দিয়া থানার মেডিক্যাল অফিসার সংস্কৃতিবান একজন হিন্দু ভদ্রলোক দুই ছেলেসহ নিহত হলেন নরপিশাচ ইফতেখারের হাতে। তার তিন মেয়ে-দু’জন গ্রাজুয়েট, একজন ম্যাট্রিকুলেট। ভাইপো, জামাইরা সবাই কাঠের মিস্ত্রী ছিল। তথাকথিত শান্তি কমিটির আহবানে ওরা ফিরে এলো শহরে, শুরু করল কাজকর্ম । হঠাৎ একদিন সবগুলো সক্ষম পুরুষকে ধরে নিয়ে গেল জল্লাদরা ওদের কেউ বাঁচতে পারেনি ঘাতক ইফতেখারের হাত থেকে। এ জাতীয় অসংখ্য নরহত্যা করেছে ইফতেখার তার পিশাচ সহচরদের সহায়তায়। এই তো গেল তার রক্তলোলুপ পিশাচ মনোবৃত্তির কথা। এছাড়া তার মত লম্পট, ঘৃণ্য নরপশু, নৈতিকতা বিহীন পিশাচ পৃথিবীর আর কোন দেশে কোন কালে ছিল কিনা কেউ বলতে পারবে না। এই নারাধম কত মেয়ের যে সর্বনাশ করেছে, কত নারী যে নিধন করেছে, কত হতভাগিনীকে উন্মাদে পর্যবসিত করেছে তার সীমা নেই। তার কবল থেকে কেই রক্ষা পায়নি। ব্রাক্ষণ, পুরোহিতদের হত্যা করেনি। তার পাশব প্রবৃত্তির লেলিহান শিখায় যে সকল সদ্য স্বামী হারা, পিতৃহারা, মাতৃহারা হতভাগিনী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদেরকে এরপর স্থানান্তরিত করা হয়েছে মহকুমার বিভিন্ন কেন্দ্রে নরাকৃতি পশু পশ্চিমা হানাদার আর কুখ্যাত রাজাকার, মুজাহিদ, আল বদর বাহিনীর কমাণ্ডার এবং স্বঘোষিত অফিসার ইন-চার্জদের হাতে। ইফতেখার লুণ্ঠন চালিয়েছে নির্বিচারে। নিজে গ্রহণ করেছে স্বর্ণ, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি মূল্যবান জিনিস, আর তার অনুচরদের দিয়েছে বাকী সমস্ত মালামাল। এছাড়া তথাকথিত শান্তি কমিটির যোগসাজশে যাকে তাকে ধরে আটক করে, শান্তি কমিটির মাধ্যমে মোটা অংকের নগদ অর্থের বিনিময়ে দু একজনকে ছেড়ে দিয়েছে। অনেক সময় টাকা গ্রহণ করেও সে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। বলা বাহুল্য তথাকথিত শান্তি কমিটি টাকা আদায়ের সময় নিজেদের অংশ আলাদা করে আদায় করেছে। হিন্দু প্রাণভয়ে মুসলমান হয়েও এই নরপিশাচ এর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। বল্লভ সাহা নামক একজন হিন্দু ব্যবসায়ী প্রাণভয়ে সপরিবারে মুসলমান হয়। তাকেও হত্যা করেছে। নরপিশাচ দীর্ঘকাল এক ত্রাস ও বিভীষিকার রাজত্ব চালিয়ে কিশোরগঞ্জকে শ্মশানে পরিণত করে।